০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১, ৪ শাবান ১৪৪৬
`

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার যৌক্তিকতা পাচ্ছে না সরকার : সিনিয়র সচিব

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের - ছবি : ইউএনবি

রাজধানীর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতা পাচ্ছে না বলে ফের জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব এ কথা বলেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে গত কিছু দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মহাখালী থেকে উল্টোপথে ফিরে যায় ট্রেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ ছিল।

তিতুমীর কলেজ নিয়ে এরইমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সাতটা কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কাজ করছে। সেই কমিটি যখন কাজ করছে, এর মধ্যে তিতুমীর বলল যে তারা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চায়। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যে দাবি, এর স্বপক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ তিতুমীরের মতো আরো অনেকগুলো কলেজ রয়েছে। ঢাকা শহরে আছে, ঢাকার বাইরে আছে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি সেখানে বলেছেন যে এ দাবি যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেহেতু আরো অনেকগুলো এ রকম কলেজ রয়েছে।’

‘তিতুমীরের যে ছাত্ররা আন্দোলনে আছে, তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা চাচ্ছে যে তাদের পড়াশুনা যাতে নির্বিঘ্ন থাকে। তাদের পড়াশোনা যাতে এই ধরনের আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সুতরাং সরকার সেটাতেও লক্ষ রাখছে।’

এরইমধ্য ইউজিসি থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে জানিয়ে মাধ্যমিকে ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী অর্থাৎ যে সময় পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টিকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায়। সেই কারণে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও কথা বলেছি। তারা নীতিগতভাবে এটুকু একমত আছে যে, সাত কলেজের দায়িত্ব তারা নেবে না। তবে এ বছর যারা নতুন ভর্তি হবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় এবং যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়; এজন্য সরকার যেভাবে বলবে তারা সেভাবে করবে।’

সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি ছাড়াও আরো দু’টি দাবি জানিয়েছে। সেটা হচ্ছে, তাদের সেখানে আরো পিএইচডি অধ্যাপক দিতে হবে। এতে আমরা একমত হয়েছি। সেখানে ১৭ জন পিএইচডি হোল্ডার আছেন, আমরা আরো দেবো।’

‘দ্বিতীয় তারা আরেকটি দাবি জানিয়েছে যে, গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেটা তো আমরা রাজি হয়েছি যে বরাদ্দ আরো বাড়াব।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দাবির বিষয়ে আমরা বলেছি, ইউজিসির কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটার ওপরেই আমরা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

তারা রেলপথ অবরোধ করেছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দু’জন যুগ্ম-সচিবকে তাদের সাথে কথা বলার জন্য পাঠিয়েছি।’

‘তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের দাবির বিষয়ে কি বলছে’-এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘তারা চায় শিক্ষার একটা পরিবেশ কলেজগুলোতে আসুক। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী বা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যারা এই আন্দোলনের মধ্যে নেই, এরা ৯০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী, তারা কিন্তু চায় যাতে পড়াশোনা অব্যাহত থাকে। শিক্ষার্থীরা যেই দিন আন্দোলন করছেও সেই দিনও কিন্তু সেখানে অনার্স পরীক্ষা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছে তারা পরীক্ষা বর্জন করেনি।’

‘তবে কি এটা গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর আন্দোলন’-এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা আপনাদের বুঝে নিতে হবে। আমি বিশ্লেষণ দিতে পারব না, আমি ঘটনা বলতে পারি।’

‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় হবে কি হবে না সেই বিষয়ে আপনারা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না কেন’-এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর অতিরিক্ত আমার কোনো বক্তব্য নেই। এখন পর্যন্ত তিতুমীরের এই দাবির যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছে না। যেহেতু আমরা একটি কমিটি করেছি, সেই কমিটিকে তিতুমীরের বিষয়টিও গুরুত্বে সাথে দেখার জন্য বলা হয়েছে। যেখানে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির রিপোর্ট দেয়ার আগে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটা কথা বলে ফেলা ঠিক হবে না।’

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement