১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি ইবিতে বাসচাপায় নিহত টিটুর পরিবার
- ইবি সংবাদদাতা
- ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:৪২
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটুর পরিবার ১০ বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি। নিহতের ঘটনায় তার পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়ার আশ্বাসও দেয় প্রশাসন। তবে সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি। পরিবারের অভিযোগ, বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তাদের সাথে এমন আচরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদেরকে এসব কথা জানান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় নিহত টিটুর বাবা, চাচা, ছোট ভাই ও দু’ বোন উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অভ্যন্তরে বাসে উঠতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান টিটু। এ সময় পেছন থেকে আসা অপর একটি বাসের নিচে চাপা পড়লে গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি বাসে আগুন দেন ও ক্যাম্পাসের সব ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে প্রায় চার মাস বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস।
সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার বলেন, ‘টিটু নিহত হওয়ার পর তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজন সদস্যকে ক্যাম্পাসে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো আশ্বাস পূরণ করেনি প্রশাসন। এছাড়া সেসময় টিটুর ছোট বোনকে প্রক্টর অফিসে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ১০ বছরেও তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি পেশ করেন টিটুর পরিবার। দাবিগুলো হলো টিটুর বোনের চাকরি স্থায়ীকরণ, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও টিটুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নামকরণ।
টিটুর ছোট বোন রত্না আজিজ বলেন, ‘ওই সময় আমার ভাই মারা গেলেও এর পুরো ফায়দা লুটেছে বাস মালিক সমিতি। তখন আন্দোলনের ফলে তাদের পুরাতন বাসগুলো পুড়ে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দু’ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে সবাই আশ্বাস দিয়েই ১০ বছর পার করে দিয়েছে। আমরা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি।’
টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ১ নম্বর এস বি কে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের আশানুরূপ সহযোগিতা করা হয়নি। আমার হার্টের সমস্যার কারণে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। এ দিকে, আমর দু’ মেয়ে ও এক ছেলের লেখাপড়া চলমান রয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে টিটু আমাদের হাল ধরার কথা ছিল। কিন্তু টিটু না থাকায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ের চাকরি স্থায়ীকরণ ও আর্থিক সহযোগিতা চাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সাথে বসব এবং বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেব।’