ইবির বিষফোঁড়া ভিসি-প্রো-ভিসি দ্বন্দ্ব
- তাজমুল জয়িম, ইবি
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৩৬, আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০৮
ভিসির কাজে সহযোগিতা ও ভিসির প্রদত্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ২০০৯ সাল থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রো-ভিসি নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আলঙ্কারিক এই পদটির সাথে ভিসির মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ইবির জন্য বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে।
এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চার মেয়াদে তিনজন প্রো-ভিসি কাজ করেছেন। ভিসি প্রদত্ত কাজে সহযোগিতার জন্য এ পদ সৃষ্টি করা হলেও বিভিন্ন সময়ে ভিসি ও প্রো-ভিসির দ্বন্দে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হয়েছে। এমনকি এসব দ্বন্দ্বের ফলে ক্যাম্পাসে রক্তপাতের ঘটনাও ঘটেছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পরই তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে ক্ষমতা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ২০১৬ সালে তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকার ও তৎকালীন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমানের মধ্যকার দ্বন্দ প্রকট হয়ে ওঠে। ওই বছরের মে মাসে ভিসিকে অপসারণের দাবিতে মানবন্ধন করে প্রো-ভিসির সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তারা। একইদিনে প্রো-ভিসির পাল্টা অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ডাকে ভিসির সমর্থক শিক্ষক কর্মকর্তারা। এসময় মানবন্ধনে যোগ দিতে আসা কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় প্রো-ভিসি গ্রুপের কর্মকর্তারা। এতে অন্তত ছয়জন আহত হন। ওই বছরের ৩০ জুন ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকারকে অব্যহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রো-ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারীর সাথেও দ্বন্দ শুরু হয় ড. শাহিনুর রহমানের। এ সময় তাদের মধ্যকার দ্বন্দের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগঠনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধু পরিষদে বিভক্তির ফলে দু’টি কমিটি গঠিত হয়। এছাড়া কর্মকর্তা সমিতিতে বিভক্তির ফলে আলাদা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমনকি কর্মচারী সমিতি ও শাখা ছাত্রলীগের মধ্যেও পড়ে এ বিভাজনের রেশ। এর ফলে বিজয় দিবসে শ্রদ্ধঞ্জলি নিবেদন করতে গিয়ে মারামারিতে জড়ায় কর্মকর্তারা। এদিকে স্বাধীনতা দিবসে শহীদ বেদীতে হাতাহাতিতে জড়ায় শিক্ষকরা।
এর আগে ২০০৯ সালের ৩ মার্চ পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনকে প্রথম প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। ড. কামাল উদ্দিনের সাথেও তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিনের সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে শিক্ষক কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব থেকে দু’জনকেই অব্যহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের সাথেও সদ্যসাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের মনস্তাত্তিক দ্বন্দ ছিল বলে জানা যায়। এ দ্বন্দ সরাসরি সামনে না আসলেও ভিসির সাথে অসহযোগিতামূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে ড. মাহবুবুরের বিরুদ্ধে। এই দ্বন্দের ফলে বিভিন্ন কাজে ইচ্ছে করেই দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভিসি-প্রোভিসি দ্বন্দের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয় বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের। দুই পদের শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজ সুসুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, আসলে প্রো-ভিসির স্পেশাল কোনো পাওয়ার নাই, তার কাজ হলো ভিসি যদি কোনো কাজ দেন তাহলে তিনি তা করবেন। কিন্তু প্রো-ভিসি হওয়ার পর সবার একটা আশা জন্মে যে, ‘ভিসিকে সরাতে পারলে আমি ভিসি হবো’। আসলে ইবির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি না থাকলেও চলে। আমি বলবো না থাকলেই বেটার।
তিনি আরো বলেন, আমার জানা মতে ড. কামাল প্রো-ভিসি থাকাকালীন সময়ে ভিসির সাথে তেমন কোনো দ্বন্দ ছিল না, কিন্তু পরে বিভিন্ন কারণে ভিসি-প্রো-ভিসি পদের দ্বন্দ শুরু হয়। এর ফলে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা ঘটেছে। এজন্য একজন ভিসি একবার শিক্ষামন্ত্রীকে এখানে প্রো-ভিসি না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল বলে আমি জানতাম। পরে স্থানীয় এক সংসদ সদস্য ওপর মহলের মাধ্যমে তদবির করে প্রো-ভিসি হিসেবে একজনকে নিয়োগ করিয়েছিলেন।