১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট

বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা আনুন

-

পতিত স্বৈরাচারী হাসিনার ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া থেকে শুরু করে বিল নির্ধারণসহ সবখানে ভয়াবহ দুর্নীতির বীজ রোপণ করা হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে। নজিরবিহীন লুটপাট চালানো হয় ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেছেন, ক্যাপাসিটি চার্জ হলো একটি লুটপাটের উৎস।
গত বছর প্রকাশিত আইএমইডির প্রতিবেদনে বল হয়, লুটপাট সরকারের গোচরে হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে ‘লুটেরা মডেল’। রাষ্ট্রের কত বিপুল অর্থ গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট হয়েছে তা পরিসংখ্যান বলে দেয়। উল্লিখিত সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয় এক লাখ সাত হাজার কোটি টাকা।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির সময় সাধারণত দু’টি দিক থাকে। একটি ‘নো কারেন্ট নো পেমেন্ট’ অন্যটি ‘নো কারেন্ট উইথ পেমেন্ট’। একসময় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেয়া হতো। নো কারেন্ট নো পেমেন্ট- এই দিকটি উল্লেখ থাকত। কিন্তু গত ১৫ বছরে উন্মুক্ত দরপত্রের পরিবর্তে পছন্দের লোকদের মাধ্যমে নিজেদের ও তাদের পকেট ভারী করতে বিনা টেন্ডারে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘নো কারেন্ট উইথ পেমেন্ট’ ধারাটি সংযোজন করা হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ না দিলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জের নামে অর্থ পরিশোধ করতে হতো। আবার তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে সে জন্য দায়মুক্তি আইন চালু করা হয়।
গত ১৫ বছরে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতা দেখানো হয় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গড়ে ১৩ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। বাকি ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের বিদ্যুৎ না নিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করা হয়।
শুরুতে তিন বছর মেয়াদে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও দফায় দফায় বাড়ানো হয় এর মেয়াদ। আবার একই কেন্দ্র সরকারের কাছে একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব কেন্দ্রের মোট বিনিয়োগের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগকারী দেন, বাকি অর্থ ব্যাংকঋণের মাধ্যমে মেটানো হয়। পিডিবি তথা সরকার সুদসহ সেই ঋণ (চুক্তি অনুযায়ী) তিন বছরে শোধ করে দেয়। পাশাপাশি ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের ওপর দেয়া হয় মুনাফা (রিটার্ন অব ইক্যুইটি)। সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণব্যয় শোধ করে দিলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র ওই কোম্পানির রয়ে যায়। পরে মেয়াদ বাড়ানো হলেও একই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে ফের নির্মাণ ব্যয় পরিশোধ করা হয়। তখন কিছুটা কম হয়। এভাবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে।
গত ১৫ বছরে সরকার ও সরকার-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের মিলেমিশে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের একটি প্রধান উৎস ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির যথাযথ বিচার হতে হবে। সবাই আশা করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদ্যুৎ খাতের এসব ‘লুটেরাকে’ দ্রুত আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেবে। একই সাথে বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা আনতে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল আর নবায়ন না করে সরকারি সংস্থা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) সক্ষমতা বাড়াবে।


আরো সংবাদ



premium cement