২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন

ঢেলে সাজাতে হবে পররাষ্ট্রনীতি

-

বিশ্ব পরিস্থিতি বদলে গেছে, সেই সাথে দেশে গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে তাই জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে নতুন করে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঢেলে সাজাতে হবে। যেখানে জনগণের স্বার্থ থাকবে কেন্দ্রে।
স্বাধীনতার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক বিস্তৃত হয়েছে। আমাদের প্রয়োজনে দেশটি বিভিন্ন সময়ে এগিয়ে এসেছে। বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেশটি বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে চেয়ে নানাভাবে বাধার মুখে পড়েছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আর সে বাধা নেই। তবে বাংলাদেশের অবস্থা এখন অনেকটা যুদ্ধবিধ্বস্তের মতো। এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য পরাশক্তি আমেরিকার সহায়তা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। আশা করা যায়, উভয় দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। ওই প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, নতুন করে গড়ে ওঠার লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায়। দেশে এখন প্রধান দুটো সঙ্কট মোকাবেলা করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এগুলো হচ্ছে- আর্থিক বিশৃঙ্খলা দূর করে ভেঙেপড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং ভেঙেপড়া আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। এ দুই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দিতে পারে।

লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প এবং সরকারের ব্যয় থেকে অবাধে লুটে নেয়া হয়েছে অর্থ। ঋণের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা জালিয়াতি করা হয়েছে। এ অর্থের প্রায় পুরোটা আবার বিদেশে পাচার হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা না গেলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্থিতি ফেরানো যাবে না। বিদেশ থেকে অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের নানামাত্রিক সহায়তা প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থের গন্তব্য জানতে গোয়েন্দা সমর্থন দরকার। এরপর দেশগুলো থেকে তা ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা লাগবে।
বিগত সরকার দেশে গুরুতর নিরাপত্তা সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। দেশের জনসাধারণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা পাওয়ার বদলে গুম, খুন ও পীড়নের শিকার হয়েছে। পুলিশকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এই বাহিনী অনেকটা বিধ্বস্ত। গণহারে খুনে- সদস্য সৃষ্টি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। দুর্নীতি-অনিয়ম পুলিশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
হাসিনার পতনের এক মাসের বেশি সময় পেরুলেও পুলিশকে কার্যকরভাবে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সেভাবে কার্যকর করা যায়নি। দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাঠামো দাঁড় করাতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে পারে। মানবাধিকারের বিস্তৃত পরিসরে গঠনমূলক পরিবর্তনেও সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন, দুর্নীতি দমনে কার্যকর অবকাঠামো প্রয়োজনে দেশটি হাত প্রসারিত করতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তিসহ ভেঙেপড়া খাতে সংস্কার প্রয়োজন হবে। তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বেশ কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক সহায়তায় গণতান্ত্রিক উন্নত ব্যবস্থায় উত্তীর্ণ হয়েছে। দেশটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করতে পারে।
সংস্কার প্রক্রিয়ায় কিভাবে যুক্ত হওয়া যায় তার উপায় নিয়ে মার্কিনি প্রতিনিধিরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে তারা উন্নয়ন সহযোগিতা হিসেবে ২০ কোটি ডলার দেয়ার চুক্তি করেছেন। আমরা আশা করব, দেশের পররাষ্ট্রনীতি নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে। বিদেশের সাথে সম্পর্কে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে জনসাধারণের স্বার্থ। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও সদিচ্ছা অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement