১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পারস্পরিক সম্পর্ক

ঢাকার মর্যাদা সমুন্নত করুন

-

একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে। সম্পর্কের মাত্রা নির্ধারণ হবে একান্ত দেশের মানুষের স্বার্থ ঘিরে। হাসিনার দুঃশাসনের মধ্যে এ দেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ পথ হারায়। এটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর। বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ধারণে বাংলাদেশ তাড়িত হয়েছে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। এ অবস্থায় দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারাও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ককে ভারতীয় আয়নায় মূল্যায়ন করেছে। এটি একদিকে আমাদের জন্য অবমাননাকর, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও অস্তিত্বের জন্য ছিল আশঙ্কার।
ফ্যাসিবাদী হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি ছলনার বাতাবরণে চালিত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবক’টি ইস্যুতে একচেটিয়া ভারতের স্বার্থ যখন রক্ষা করা হচ্ছিল, এমনকি ক্রমবর্ধমান হারে সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ হত্যা করা হচ্ছিল, তখনো উভয় দেশের নেতারা দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ বলে প্রচার চালিয়েছেন। এ ধরনের একটি অন্যায্য একপেশে সম্পর্ককে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী সম্পর্কে বৈশ্বিক মডেল বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সময়ে বাংলাদেশের মানুষ গণহারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা খুন, গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। পরপর তিনবার জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকরা ভোট দিতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশীরা সব ধরনের ভোটাধিকার হারান।
এমন একটি সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ভারত ক্রমাগত বাংলাদেশের সাথে নিজেদের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে দাবি করেছে। হাসিনা সরকারকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ থেকে বাঁচাতে সম্ভব সব পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভোটাধিকার নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করে; সেজন্য নমনীয় রেখেছে। বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে হাসিনা সরকারকে কৃত অপরাধ থেকে বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছে দিল্লি।
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাইডেন প্রশাসন শক্ত অবস্থান নেয়। ভিসানীতি প্রয়োগ ও মানবাধিকার প্রশ্নে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পথে অগ্রসর হলে ভারত কূটনৈতিক দরজা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করে খুনি হাসিনা সরকারকে বিপদমুক্ত করে। পতিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এ কথা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ঠেকানো না গেলে বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় হাসিনার পতন হতো। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েমে ভারত দায় এড়াতে পারে না। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে।
বিগত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফরকালে দিল্লি হয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি এমন হয়; প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা দিল্লি সফর করেছেন। মানুষ যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা দেখতে চাচ্ছিলেন সেখানে দেখা যেত দিল্লির সংযুক্তির পর তা বদলে গেছে কিংবা চাপা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে কোনো পক্ষ লাভবান হয়নি। ভারত তাৎক্ষণিক কিছু সুবিধা পেলেও এখন ফ্যাসিবাদী হাসিনার দায় নিতে হচ্ছে দিল্লিকে। অন্যদিকে আমেরিকার প্রতি মানুষের কিছুটা অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে, বন্ধুত্ব দুর্বল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত যে চীন-ভীতি দেখাত; সেটি ভুল প্রমাণ হয়েছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমানো যায়নি। বিগত দেড় দশকে ভারতের প্রতিবেশী প্রতিটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিল্লির থেকে বেইজিং বন্ধুত্বে এগিয়ে গেছে। ভারতকে নিয়ে চীন ঠেকানোর নীতি এ অঞ্চলে অকার্যকর হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে আলোচনায় বাইডেন প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছে। এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দিল্লিø হয়ে ঢাকা আসছেন। যদিও দেখা যাচ্ছে, দিল্লিতে আগে থেকে তার সফরসূচি রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চান। কিন্তু সেটি হতে হবে সরাসরি। আশা করা যায়, এবার যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সাথে নতুন করে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টায় নজর ভারতের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট নাটোরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৬ বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ ভিসা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের শহীদ পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম

সকল