২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভারতের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ করিডোর

দেশের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য

-

সদ্য পতিত দিল্লির তাঁবেদার হাসিনা সরকার গদি টিকিয়ে রাখতে গোপনে ভারতের সাথে গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশবিরোধী কত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এসব স্মারক-চুক্তি অত্যন্ত গোপনে স্বাক্ষরিত হয়েছে। একই সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প নেয়া হয়। গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর এখন এসব জানা যাচ্ছে। এমনই একটি যৌথ প্রকল্প হচ্ছে ‘ভারতের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ করিডোর বাংলাদেশের ঋণে’। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এ জন্য কোনো কারিগরি সমীক্ষা হয়নি।
চাহিদা না থাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না দেশটি। বিদ্যুৎ করিডোর পেলে ভারতের এ অংশের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অন্য অংশে নেয়া সহজ হবে। তাই ভারত দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত নদীতে বাঁধ দিয়ে এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, যাতে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, ভারতের স্বার্থ রক্ষায় একতরফাভাবে পাওয়ার গ্রিডের মাধ্যমে উপরিউক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দেয় হাসিনা সরকার। তিনি ক্ষমতা হারানোর শেষ সময়ে ১৮-২১ জুলাই ভারতে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত যৌথ পরিচালনা কমিটির সভায় এককভাবে সম্মতি দিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী।
পিজিসিবির সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৬৫ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপনে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় তিন মিলিয়ন ডলার। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ব্যয় হবে ৯০০ মিলিয়ন বা ৯০ কোটি ডলার; যা স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উপরে। ভারতের প্রয়োজনে এ লাইন স্থাপনে এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এ অর্থ ঋণ দেবে। ঋণের দায় বহন করতে হবে বাংলাদেশকে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রের বরাতে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ভারতীয় কোম্পানি আদানি থেকে বাংলাদেশ প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ জন্য আলাদা সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে আলাদা আরেকটি সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাবিত সঞ্চালন লাইন স্থাপনে কালক্ষেপণ করছিল। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল এই সঞ্চালন লাইনের কাজ ভারত নিজে করবে। পরে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কোম্পানি গঠন করে ওই কোম্পানির মাধ্যমে এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতাসংক্রান্ত যৌথ পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি প্রথমে দিল্লি নিজস্ব টাকায় করতে রাজি থাকলেও আলোচ্য সভায় কাজটি পিজিসিবি করবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়ে আসেন সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী।
আমরা আশা করি, শুধু বিদ্যুৎ করিডোর নয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নেয়া দিল্লির স্বার্থে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সব প্রকল্প দেশপ্রেমিক অন্তর্বর্তী সরকার খতিয়ে দেখবে। একই সাথে দিল্লির সাথে আমাদের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি-সমঝোতা স্মারক এবং প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement