সংস্কারের সময় এখনই
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে কারাগার হয়ে উঠেছিল বিরোধী মতের মানুষের বন্দিশালা। আইন-আদালত সরকারের গ্রাহ্যে ছিল না। আটক ব্যক্তিদের মানবাধিকারেরও পরোয়া করা হয়নি। কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন-চার গুণ পর্যন্ত বন্দী রাখা হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যাওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যে কারাবন্দীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। তবে কারাগার নিয়ে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর সব পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম-দুর্নীতি। হাসিনার দুঃশাসনে পুলিশের মতো কারা কর্মকর্তাদের বড় অংশ তাদের পদ-পদবি ব্যবহার করেছে শুধু অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য। একটি আদর্শ সংশোধনাগার হওয়ার বদলে বিগত ১৫ বছরে কারাগার হয়ে উঠেছে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। দুর্নীতিবাজ কারা কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা না গেলে এখানে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে কারাগারে গুরুতর কিছু ঘটনা ঘটে। বিরোধী দলের বেশ কিছু নেতাকর্মী কারা অভ্যন্তরে মারা যান। তাদের মৃত্যু নিয়ে পরিবার ও দল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। কারা কর্তৃপক্ষ ছিল বিরোধী মতের লোকদের পীড়নের জন্য সরকারের অস্ত্র। কারাবিধি অনুযায়ী যেসব সুযোগ আটক ব্যক্তি ও পরিবার পাওয়ার কথা সেসবের তোয়াক্কা করা হয়নি। তাদের নাজুক অবস্থার সুযোগে ফায়দা লোটা হয়েছে। অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে দেদার অর্থ। নিপীড়নের কোনো ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি।
কারা প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তার ঘুষবাণিজ্য প্রকাশ্যে এসে যায়। তাদের অনেকে বিপুল নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সময় হাতেনাতে ধরাও পড়েন। বিগত সরকারের আমলে এ ধরনের কয়েক ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের কথা জানা যায়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দুদকের ওই সব তদন্ত যেমন চূড়ান্ত কোনো পরিণতি আনেনি, সরকারও এসব দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় আনার ন্যূনতম তাগিদ বোধ করেনি। কারাগার থেকে অপরাধী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বগুড়া কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কনডেম সেলে থাকা আসামি পালিয়ে যায়। টানা ২৫ দিন ছাদ ছিদ্র করার কাজ চলেছে অনেকটাই প্রকাশ্যে। এর আগে কথিত জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি পালিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় নরসিংদী কারাগার থেকে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়ে যায়।
দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি নিয়ে কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। এসব ঘটনা অমার্জনীয় হলেও তা অব্যাহতভাবে চলতে পেরেছে। ওয়ার্ড, খাবার, ক্যান্টিন, দেখার ঘর, কারা হাসপাতাল সব জায়গায় চলছে ঘুষবাণিজ্য। বন্দীর নাম ভুলে এন্ট্রি করে তার সুযোগেও ঘুষ আদায় করা হয়। হাসিনার আমলে এসবের কোনো কিছুর প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
কারা প্রশাসনের সর্বনিম্ন থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে আছে। এই দুর্নীতিবাজ চক্রকে সমূলে উৎপাটন করার উপযুক্ত সময় এসেছে। গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই বিভাগে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হোতাদের তালিকা তৈরি কঠিন নয়। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধের মাধ্যমে কারাগারে সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমরা আশা রাখব, সরকার কারাব্যস্থার সম্পূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে একটি শুদ্ধ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আন্তরিক পদক্ষেপ নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা