২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
থামানোর নেই কেউ

কৃষক খামারিদের হাহাকার

-


একটি সহযোগী দৈনিকের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় কৃষি খাতে রোপা আমনবীজ, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপা আউশ, বোনা আমন ও আখের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে পুকুর, খামার ও দিঘির অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে পোলট্রি, গবাদিপশু খামারের ক্ষয়ক্ষতিও স্পষ্ট।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কৃষক এবং খামারিদের মধ্যে হাহাকার। ফসল, মাছ ও গবাদিপশু হারিয়ে তারা দিশেহারা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আবারো ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কৃষক ও খামারিরা তাদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সহায়তার জন্য উপজেলা মৎস্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন নিয়ে ছুটছেন। সরকারি সহায়তা তারা কতটুকু পাবেন এ নিয়েও হতাশার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

ভয়াবহ বন্যায় সরকারিভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি ২০০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কৃষক ও খামারি পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে গেছে। উপজেলার মাঠের পর মাঠ আমনের বীজতলা, রোপা আমন, রোপা আউশ ও শাকসবজি ক্ষেত পানিতে পচে গেছে। মৎস্যখামার, পুকুর, দিঘিগুলোতে মাছ নেই। এ ছাড়া গবাদিপশু, পোলট্রি খামারগুলো খালি পড়ে আছে।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রোপা আমনের বীজতলা ৬৭০ হেক্টরের মধ্যে ৪২৫ হেক্টর নষ্ট হয়ে গেছে। ২৪০ হেক্টর রোপা আপনের জমির মধ্যে ২২৮ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত। ৯ হাজার ৬১০ হেক্টর রোপা আউশ জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ছয় হাজার ৮৭০ হেক্টর। ৩৫০ হেক্টর বোনা আমন জমির সবটুকুই নষ্ট। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি খাতে ক্ষতির আর্থিক মূল্য ১১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর, দিঘি ও মৎস্যখামার হচ্ছে তিন হাজার ১৬২টি। এর মধ্যে ফিনফিশের (রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাপিয়া) ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ৮৯৭ টন, যার আর্থিক মূল্য ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তিন কোটি টাকার পোনা মাছ ভেসে গেছে, যার আর্থিক মূল্য চার কোটি টাকা। পুকুর, দিঘি ও মৎস্য খামারের অবকাঠামোগত আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়েছে ছয় কোটি ৩৩ লাখ টাকা। উপজেলা মৎস্য অধিদফতর থেকে মৎস্য খাতে মোট ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামার হচ্ছে এক হাজার ১২৩টি। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি ২০ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হাঁস-মুরগির খামার ৬৪৭টি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে এক কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ক্ষতিক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও পোলট্রি খামারি আনোয়ার হোসেন মুকুল বলেন, ‘বন্যায় মৎস্য ও পোলট্রি খাতে আমার প্রায় ছয় কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়ে গেছি।’ উপজেলার বটতলী ইউনিয়নে কাশিপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার চার একর জমির কাঁচা-পাকা আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে আনার কোনো উপায় নেই। পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির তথ্য চেয়েছে। তথ্য পাঠিয়েছি।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আমার কাছে আবেদন করেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, ‘আমরা তিনটি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছি। যদি আর্থিক সহায়তা অথবা উপকরণ আসে, তাহলে নির্দেশনা অনুযায়ী তা ক্ষতিগ্রস্তদের বিতরণ করব।’
যেকোনো কাজে জনগণের স্বার্থই মুখ্য। গরিব চাষিদের হাহাকার তাই জনস্বার্থের পরিপন্থী। এটি যেকোনো মূল্যে থামাতে হবে। এ জন্য সবারই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement