২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পোশাক খাত অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা

হোতারা স্বৈরাচারের দোসর

-


আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শীর্ষে তৈরী পোশাক খাত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে এ খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ গত দেড় দশকে স্বৈরাচারের দোসররা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে খাতটি দুর্বৃত্তায়নের আখড়ায় পরিণত করে। এখন ছাত্র-জনতার জীবন ও সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত গণ অভ্যুত্থান নস্যাৎ করতে লুটেরা শ্রেণী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। পর্দার আড়ালে থেকে অহেতুক ও অযৌক্তিক কিছু দাবি তুলে পোশাক খাত অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে জাতীয় নির্বাচনের মতো দেশের সব পেশাজীবী সংগঠনেও নামকাওয়াস্তে ভোটগ্রহণ করে অনুগতদের ক্ষমতায় বসানো হয়। তৈরী পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রকৃত বাস্তবতায় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সক্রিয় সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। গত দেড় দশক ধরে পোশাক খাতে ছিল খুনি, সন্ত্রাসী, অর্থ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য। ফলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েছিলেন অসহায়। সংগঠনটিতে আধিপত্য বিস্তারে ভুয়া ভোটার বানিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গত দেড় দশকে স্বৈরাচারের দোসররা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা ধরে রাখে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সাধারণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া হয়নি। পরিণতিতে সংগঠনটি দীর্ঘ দিন একটি স্বার্থান্বেষী ও স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এর স্বাভাবিক কার্যক্রম আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মার্চ বিজিএমইএ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ক্ষমতায় আসে, যা সাধারণ সদস্যদের মনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়।

এখন অবস্থা এমন যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা গণ আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যরা এখন তাদের এই শীর্ষ সংগঠনের সংস্কার দাবি করছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অবিলম্বে ভেঙে দিয়ে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়াসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। কারণ, সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্বের নিজের কোনো কারখানা না থাকলেও বিজিএমইএর সদস্য হয়ে জোর করে ক্ষমতার দাপটে সভাপতি হন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক। বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে এস এম মান্নান কচি দলীয় ক্যাডার দিয়ে সংগঠনটির ক্ষমতা দখল করেন।
গত ৪ আগস্ট মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে এস এম মান্নান কচি ও তার সহযোগীরা ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় উত্তরা ও মিরপুরে বিজিএমইএর পলাতক এ সভাপতির নেতৃত্বে তার ক্যাডার বাহিনী মূল ভূমিকা পালন করে। এটি সব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনে কয়েক শ’ ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার পরও বর্তমান বোর্ড ও সভাপতি কোনো শোকবার্তা দেয়নি। বিজিএমইএ সভাপতি ও তার বোর্ড ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলন ও গণজোয়ারে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ভূমিকা নেয়ায় তারা দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে সাধারণ সদস্যরা মনে করেন।

লক্ষণীয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সৃষ্ট সঙ্কটে তৈরী পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে বিজিএমইএ পর্ষদের সঠিক কোনো নির্দেশনা ছিল না। এ ছাড়া সংগঠনটি গত কয়েক সপ্তাহে ব্যবসায় পরিচালনায় কার্যকর কোনো নির্দেশনা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতি ও চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। আমরা মনে করি, দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত তৈরী পোশাক কারখানার শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাধারণ সদস্যদের সাথে আলোচনা করে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালনা বোর্ড গঠন করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করাও সময়ের দাবি। পতিত হাসিনার দোসর যারা সংগঠনটির নেতৃত্বে, তাদের বহাল রেখে স্থিতিশীলতা আশা করা যায় না।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল