২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জনস্বার্থে সংস্কারের নির্দেশ

রাষ্ট্র হোক জনবান্ধব

-

রাষ্ট্র নামের সঙ্ঘশক্তি সততার সাথে নিয়ম-নীতির ওপর দাঁড়ালে যেকোনো দেশের ব্যক্তিপর্যায় থেকে সামষ্টিক স্তরে উন্নতি-অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। এমন উদাহরণ অনেক আছে। তবে আমাদের হাতের কাছে সবচেয়ে জুতসই দৃষ্টান্ত সিঙ্গাপুর। দরিদ্র অবস্থা থেকে দেশটি ধনী দেশের কাতারে উঠে এসেছে। অথচ আমরাও সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি; কিন্তু বাংলাদেশে আয়বৈষম্য ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে গত সাড়ে ১৫ বছরে বৈষম্য অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করায় সবকিছু এখন লণ্ডভণ্ড।
গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার বলতে কিছু ছিল না। না ছিল মতপ্রকাশের অধিকার, না ছিল আইন মেনে ব্যবসাবাণিজ্যের অধিকার। আর সরকারি চাকরিতে ভিন্ন মতের প্রবেশাধিকার ছিল নিষিদ্ধ। ফলে সারা দেশে দমবন্ধ অবস্থায় সরকার-সমর্থক ছাড়া বাদবাকি মানুষ ছিল অসহায়। তাদের কান্না চার দেয়ালে ছিল বন্দী। আল্লাহর অশেষ রহমতে এমন অবস্থা থেকে জাতি উদ্ধার পেয়েছে ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট হাসিনার পতনে।
স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। জন-আকাক্সক্ষার এ সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করছে। মাত্র এক মাস বয়সী সরকার ইতোমধ্যে অনেক কাজের শুভ সূচনা করেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের জনপ্রত্যাশা এগিয়ে নিতে ইউনূস সরকার ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর নমুনা পাওয়া যায় সচিবদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে। ওই বৈঠকে জনস্বার্থ সামনে রেখে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সংস্কার পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সচিবদের নিজ পরিকল্পনা এক পাতার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠাতে বলেছেন তিনি। সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সচিবদের সাথে বৈঠকে এ নির্দেশনা দিলেন তিনি।
সভায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সচিবদের বলেন, সৃষ্টিশীল ও নাগরিকবান্ধব মানসিকতা নিয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয়-বিভাগ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কর্মসূচির কর্মপরিকল্পনা মাত্র এক পাতায় দাখিল করতে হবে। অধিক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার করুন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামল এবং বাংলাদেশের আমলের দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেল। অথচ আমরা এখনো ব্রিটিশ আমলের চিন্তা ও ধ্যানধারণা আঁকড়ে পড়ে আছি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে গৎবাঁধা চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
স্বাধীনভাবে নবোদ্যমে অধিক্ষেত্রে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সাহসের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারো কোনো কথায় কান না দিয়ে বিবেকের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে সততার সাথে সরকারি দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে। সরকারের সব কাজ হবে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে ও জনস্বার্থে। চাহিদা অনুসারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো আমরাও মনে করি, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন মানবিক দেশ গড়ার যে প্রত্যয়, যে ভয়হীনচিত্ত উপহার দিয়েছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে বিবেক ও ন্যায়বোধে উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আগ্রহ, ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, দেশের স্বার্থে তা সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগানোর মধ্যেই নিহিত রয়েছে আগস্ট বিপ্লবের সার্থকতা।


আরো সংবাদ



premium cement