সবার আগে প্রয়োজন স্বচ্ছতা
- ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
দেশের বড় ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। তারা একের পর এক বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান ও অর্থ উপদেষ্টার সাথে। পতিত স্বৈরাচারের পতনের শেষ মুহূর্তেও একজন ব্যবসায়ীকে বঙ্গভবনে ছুটে যেতে দেখা গেছে রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের জন্য। এখন তারা ব্যক্তিগতভাবে এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সক্রিয় রয়েছেন।
সবশেষ গত মঙ্গলবার তারা বৈঠক করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সাথে। তারা কারখানার নিরাপত্তাসহ ব্যবসায়-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং অন্যান্য সুবিধা চেয়েছেন। উপদেষ্টা তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। অন্য দাবিগুলোর বিষয়েও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।
আমরা জানি, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিকল্প নেই। সবার আগে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা ও বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এ জন্য শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামোর জোগান দেয়াও জরুরি। ব্যাংক ঋণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিপমেন্ট সুবিধার পাশাপাশি প্রয়োজনে প্রণোদনা দেয়াও দরকার। এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার প্রশ্ন নেই। কিন্তু তারপরও কথা থাকে।
এ মুহূর্তে সবার আগে দরকার অর্থনীতির বিপর্যস্তকর অবস্থা কাটিয়ে ওঠা। এ জন্য ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের সহায়ক ভূমিকা প্রত্যাশিত। কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো রাজনীতিনিরপেক্ষ নয়; বরং গত ১৬ বছরে তাদের বড় একটি অংশ স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে প্রকাশ্যে কাজ করেছে। স্বৈরাচারী যাবতীয় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, অর্থ পাচার, জনগণের ভোটাধিকার হরণসহ সমস্ত অপকর্মে সক্রিয় সমর্থন দিয়েছেন। বিনিময়ে অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ আহরণ ও বিদেশে পাচারসহ কেউ কেউ এমনকি হত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ থেকেও রেহাই পেয়েছেন।
সরকারের ব্যর্থতায় বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বহু শ্রমিক বেকার হয়েছেন। নতুন বিনিয়োগ হয়নি। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে শিল্পোৎপাদন ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাঁদাবাজি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার পরও এসব ব্যবসায়ী টুঁ শব্দ করা দূরের কথা, উল্টো স্¦ৈরাচারী সরকারকে টিকিয়ে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তারা করোনা মহামারীসহ নানা অজুহাতে বারবার প্রণোদনা পেয়েছেন, খেলাপি ঋণের বিপরীতে বারবার সুবিধা নিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী প্রণোদনার অর্থ শেয়ারবাজারে বা জমি কেনায় অথবা অন্য ব্যবসায় খাটিয়েছেন- এমন অভিযোগ এন্তার।
এমনকি জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান প্রতিরোধে এ গণবিরোধী ব্যবসায়ীরা সরকারি পেটোয়া বাহিনীগুলোকে বিপুল অর্থের জোগান দিয়েছেন, এমন অভিযোগ আছে। এসব ব্যবসায়ীর দেশ ও জনগণের প্রতি কোনো দায় নেই; বরং তাদের গণবিরোধী বললেও কম বলা হয়। এখন আন্দোলনের সময় কারখানার উৎপাদন ও রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তারা দুই হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবি করেছেন।
আমরা এসব দাবির বিষয়ে আপত্তি তুলছি না। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঘটনাগুলোর তদন্ত হওয়া দরকার। ব্যবসায়ীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত দরকার। তার চেয়েও বেশি দরকার, স্বচ্ছতা আনা। অর্থনীতির প্রতিটি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে; যাতে জনগণের একটি টাকাও নয়ছয় না হয়। কেউ যেন অন্যায্য সুবিধা না পান।
আমরা সর্বক্ষেত্রে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির আশা করি, যেখানে কেবল মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী নন, সবাই সমান সুযোগ পাবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা