মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রথম ধাপ
- ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫ বছর এক দানবীয় শাসনে পিষ্ট হয়েছেন। ফ্যাসিবাদের জগদ্দল পাথর সবার ওপর চেপে বসে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে তার দগদগে ঘা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এখনো মানুষ বিশ্বাস করতে পারছেন না, গুম খুন ও ভয়াবহ পীড়নের অবসান হয়েছে। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন মিডিয়া ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মধ্যে দানবীয় সরকারের দোসররা রয়ে গেছে। যারা সরকারের প্রতিটি অবিচার-অন্যায় ও পীড়নের সমর্থন দিয়ে বৈধতা দিয়ে গেছে। পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা ফ্যাসিবাদের বীজ উপড়ে ফেলতে না পারলে আবার যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারে নিষ্ঠুর শাসন। অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল ও বিপ্লবের নায়ক ছাত্রদের ওপর নির্ভর করছে আগামীর বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র হয়ে উঠবে কি না।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে দেখা গেছে, বারবার পুরনো বিতর্কিত ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। দল কিংবা সরকারের পরিবর্তন হয়েছে- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। এর হোতারা ব্যানার পাল্টিয়ে নতুন শাসকগোষ্ঠীর ভেতর অনুপ্রবেশ করেছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট আগের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী মাফিয়া সরকারের সদস্যরা কেউ কেউ পালিয়েছেন। আবার অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। তাদের রঙ বদলানোর আপাতত সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একটি আশাপ্রদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এমনকি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ৮ আগস্টের পর নতুন করে এ দলে যোগদানের ওপর তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। চাঁদাবাজির অভিযোগ আসার পর কারো কারো বিরুদ্ধে দলটির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের সাথে সমঝোতার অভিযোগ আছে, সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র থেকে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্রে উন্নীত হতে হলে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তাদের দোসররা। বিশেষ করে গণমাধ্যম ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মধ্যে এ শ্রেণী রয়েছে। এরা এখন ভোল পাল্টালেও সুযোগ বুঝে যেকোনো সময় নতুন ফ্যাসিবাদ তৈরির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এরা তার হয়ে কাজ করেছে। বিগত ১৫ বছরে এরা অধিকারহারা বিরোধীদের ওপর সরকারি পীড়ন বাড়াতে সহযোগিতা করেছে। সাংবাদিকতার নিয়ম-কানুনের বালাই মানেনি। এসব মিডিয়া এখন উল্টো সুর নিয়েছে। তাদের কৃত অপরাধের অপনোদন হওয়া দরকার। কোনো মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হোক- এমনটি সমর্থন করা যায় না। তবে এসব মিডিয়া যেসব সাংবাদিক ও মালিক জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যাতে করে দৃষ্টান্ত থেকে যায় গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যা তা করলে তার নিশ্চিত শাস্তি হবে। একই ধরনের ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও ব্যাংক মালিকসহ দেশের সব স্তরের ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে। অন্যথায় মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের পথে বড় ধরনের ঝুঁকি থেকে যাবে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার কায়েম হলেও দেশকে স্থিতিশীল মানবিক রাষ্ট্র করতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হবে। এজন্য প্রথম ধাপ হলো অপরাধীদের কৃত অপরাধের শাস্তি বিধান করা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যতটুকু অপরাধ ততটুকু শাস্তি। বাড়াবাড়ি হলে সেটি কখনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। তবে কাজটি করতে সরকারকে অত্যন্ত বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে। সহযোগিতা লাগবে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং বিপ্লবী ছাত্রসমাজের। সবার সমন্বয়ে কাজটি সম্পন্ন করা গেলে রাষ্ট্র নির্মাণের পরবর্তী ধাপে আমরা এগোতে পারব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা