২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি দেশ

পূর্বাভাসে দুর্বলতা

-


বন্যা বাংলাদেশে একটি মৌসুমি বিষয়। এ দেশের মানুষ জানেন পানি কতটুকু উঠতে পারে, কত সময় লাগতে পারে। সে জন্য আপনা থেকে একটা প্রস্তুতি থাকে। গত কয়েক দিনে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক প্লাবনের মুখোমুখি দেশের দক্ষিণ-পূর্বের জেলাগুলো। বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের ফেনীতে। জেলাটির ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তলিয়ে যায়। বন্যা এতটাই আকস্মিক যে, অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো এলাকা সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একইভাবে ত্রিপুরা সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশের পুরো অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। সেসব এলাকাও এবার প্লাবিত হয়েছে যেখানে কখনো বন্যার রেকর্ড নেই। এ অবস্থায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় এ ধরনের বন্যা সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে। তাই এ নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে এখন খবর প্রকাশ হচ্ছে, গুরুতর পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অনুমান করা যাচ্ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টের মাঝামাঝি এ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের সতর্কতায় বলা হয়েছে। তারা অব্যাহতভাবে এই পূর্বাভাস দেখিয়ে গেলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর ততটা গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতা দেখায়নি। সরকারের এ অধিদফতর দেশের দুর্যোগ মোকাবেলায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসদানে সেভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এরপরও এর কর্তাব্যক্তিরা কখনো জবাবদিহির আওতায় আসেন না।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলো মুহূর্তের মধ্যে গভীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কেউ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো ধরনের কার্যকর উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি। এমন ব্যর্থতা খতিয়ে দেখা দরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সক্ষমতা দুর্বল; নাকি গাফিলতি তা বিবেচনায় আনতে হবে। শুধু ভারী বৃষ্টিপাতে অল্প সময়ের মধ্যে বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে এমন হওয়ার নয়। এর সাথে উজানের বাঁধ খুলে দেয়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই বাড়তি পানি বাড়তি বিপদ ঘটিয়েছে। ভারত নিজেদের অংশে কিছুটা উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ জানতেও পারেনি উজানে বাঁধ খুলে দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে সদ্য পতিত স্বৈরাচার দেশের মানুষের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ায় ভারত এমন আচরণ করেছে। এখন আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভারতের সাথে কার্যকর কথা বলবে। যাতে অন্তত বাঁধ ছাড়া-সংক্রান্ত সংবাদ বাংলাদেশকে অগ্রিম জানানো হয়। আমরা মনে করি, নদীপাড়ের সব মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা চাইব না বন্যায় ভারতের মানুষেরও ক্ষতি হোক। একইভাবে ভারতকেও বাংলাদেশের মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভাবতে হবে।

পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ, বন্যাকবলিত এলাকায় সাহায্য নিয়ে পৌঁছা দুরূহ। সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের উদ্ধার অভিযান যখন বেশি প্রয়োজন তখন দেখা যাচ্ছে, নতুন করে দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হচ্ছে। এবারের বন্যায় আমাদের অনেক বড় ক্ষত সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি এককভাবে মোকাবেলা করা কঠিন একটি কাজ। তাই দেশবাসীকে সম্মিলিতভাবে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমে উদ্ধারে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে হবে, তারপর ত্রাণ ও পুনর্বাসনকাজ করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement