২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বন্যাকবলিত ৩০ লাখ মানুষ

দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই

-


ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় বন্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। শুধু নোয়াখালীতেই ২০ লাখের মতো মানুষ পানিবন্দী আছেন।

উল্লিখিত আট জেলায় পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বহু রাস্তা, বাঁধ ও সেতুর অংশ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, কুশিয়ারা, মনু, ফেনী, ধলাইসহ কয়েকটি নদীর পানিপ্রবাহ বিপদসীমার ওপরে চলে যাওয়ায় বন্যা বিস্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ চলতি বন্যায় সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে অব্যাহত বৃষ্টি। আরো ৪৮ ঘণ্টা ধরে বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী ও হালদা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারী বৃষ্টিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারত ৩১ বছর পর মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) এক দিকের বাঁধের গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যার জন্য অনেকে বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে, ভারতের জলাধারের ‘গেট খুলে দেয়াকে’ দায়ী করছেন।
জলাধারের গেট খুলে দেয়া প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভারতের কাছে ‘স্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জানেন, এই যে বাঁধ খুলে দেয়া হলো, একটি রাজনৈতিক জায়গা থেকে দুর্যোগটি নিয়ে আসা হলো বাংলাদেশে, সেই জায়গা থেকেও তাদের এই রাজনৈতিক প্রশ্নটি মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশের সাথে কোনো আলোচনা বা অবহিত না করেই বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি। তারা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। যদি কোনো রাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তা হলে বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু তার জবাব দেবে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলামের মতো আমরাও মনে করি, আমাদের প্রিয় স্বদেশ এখন একটি রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করছে। এমন সময়ে আকস্মিক এ বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারি-বেসরকরি সংস্থাসহ ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে আর্তমানবতার সেবায় আন্তরিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে; যাতে বন্যাদুর্গতরা তাদের ওপর আপতিত দুর্যোগ কাটিয়ে দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement