দলীয় লেজুড়বৃত্তি আর নয়
- ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
গত দেড় দশকে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশের ছাত্ররাজনীতির যে বীভৎস চেহারা তুলে ধরে তাতে এর প্রতি দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনা জমানায় শিক্ষাঙ্গনের অবস্থা এমন শোচনীয় হয়ে ওঠে যে, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কেউ না গেলে নির্যাতন করা হতো। এসব দেখে দেশে ছাত্ররাজনীতির নামে এখন যা চলছে তার প্রতি আমজনতা বীতশ্রদ্ধ। এসব কারণে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে। সঙ্গতকারণে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী-অভিভাবক মনে করেন, ক্যাম্পাসগুলোতে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক, সন্ত্রাস ও পেশিশক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতির আদৌ কোনো প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
অন্য দিকে অনেকে একেবারে বন্ধ না করে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে ছাত্ররাজনীতি সীমিত রাখার ব্যাপারে মত দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তারা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্তত ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ ও দু’টি সরকারি কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দেখা গেছে, বিগত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী। এরপর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা অভিযোগ এনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে’ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন।
রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গসংগঠন হিসেবে কোনো ছাত্র সংগঠন রাখতে পারবে না, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন) এমন বিধান রয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো কৌশলে ছাত্র সংগঠন রেখে দিয়েছে। কেউ ভ্রাতৃপ্রতিম, কেউ সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্র সংগঠন রেখে দিয়েছে।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতনের পর মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক বিকাশ এবং অধিকার আদায়ে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনেও সব সময় কাজ করবেন, জাতীয় স্বার্থে কথা বলবেন, এটি সবার প্রত্যাশা।
জন-আকাক্সক্ষার সাথে সহমত পোষণ করে আমরাও মনে করি, ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি ছাত্র সংসদভিত্তিক হওয়া উচিত। কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন না। তাই খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্য অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে সবার স্বার্থে। যাতে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা