অপরাধ বিবেচনায় উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হোক
- ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
স্থানীয় সরকারের প্রায় সব জনপ্রতিনিধি জনগণের ভোটে সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসেননি। বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনব্যবস্থা একটি হাসিঠাট্টার আয়োজনে পরিণত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বের কোনো দেশে এ ধরনের প্রহসন আগে কোথাও আর দেখা যায়নি। সরকার যাকে খুশি তাকে জনপ্রতিনিধি বানিয়েছে। এই সুযোগে চোর ডাকাত খুনি ঋণখেলাপি চোরাচালানিসহ চিহ্নিত অপরাধীরা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বনে গেছেন। সাধারণত যে যত বেশি টাকা খরচ করেছেন তিনি তত বড় পদ বাগাতে পেরেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার পদগুলোকে অনেকটা ইজারা দেয়ার মতো করে ভাগবাটোয়ারা করেছে। সঙ্গতকারণে অন্তর্বর্তী সরকার মেয়র, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকারের বড় একটা অংশকে অপসারণ করেছে।
স্থানীয় সরকারের চার স্তরে এক হাজার ৮৭৬ জনকে অপসারণ করা হয়েছে। এখনো বহালতবিয়তে রয়েছে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেম্বাররা। এরা স্থানীয় সরকারের একেবারে তৃণমূলে রয়েছে। এখানেও প্রতিনিধি নির্বাচনে কোনো ধরনের নিয়মকানুনের বালাই অনুসরণ করা হয়নি। কোটি টাকায় চেয়ারম্যান পদ বিক্রি হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। একেকজনকে মেম্বার বানানো হয়েছে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে। এরা অবৈধভাবে প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে স্থানীয় জনসাধারণের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনেছেন। জনসেবার কোনো বালাই ছিল না, সবার একটাই লক্ষ্য ছিল, কিভাবে অর্থ কামাই করা যায়। এই কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় মানুষেরা ব্যাপক শোষণের বঞ্চনা ও পীড়নের শিকার হয়েছেন।
ইউনিয়ন কাউন্সিলে জন্ম ও নাগরিক সনদ বিতরণসহ কিছু সামাজিক সেবামূলক কাজ হয়। এগুলো আনতে ভোগান্তির শেষ ছিল না। দিতে হয়েছে নির্ধারিত হারে চাঁদা। এর সাথে স্থানীয় চাঁদাবাজি দখলদারি, অবাধ লাইসেন্স তারা পেয়েছেন। একেকজন চেয়ারম্যান এখন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, মেম্বাররাও কম যাননি। স্থানীয় সরকারের এই সর্বনিম্ন স্তর নিয়েও সরকারকে তাই জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। স্থানীয় সরকারের ওপরের দিকের স্তরেও একই শোষণ ও ভোগান্তি মানুষকে পোহাতে হয়েছে। এদের অপসারণ করলেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। গণতন্ত্র ধ্বংসে এরা বিগত সরকারের সহযোগী হয়েছে। এই অপরাধের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে করে পরবর্তীতে এ ধরনের বেআইনি কাজে কেউ অংশগ্রহণের সাহস না পান। পাশাপাশি দুর্নীতি করে জনগণের পকেট কেটে যে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন তার জন্যও তাদের উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। পুরো কাজটি শেষ করা একটি বিশাল জটিল যজ্ঞ। আমরা মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ সংশোধনের জন্য তার পরেও ধৈর্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে তা সম্পন্ন করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসনে ডিসি ও ইউএনও নিয়োগে মেধা যোগ্যতা প্রাধান্য পায়নি। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছায় সরকারের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে যাদের ব্যবহার করা যাবে, তাদের এসব পদে পদায়ন করা হয়েছে। এক দিকে অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, অন্য দিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে নিযুক্ত ডিসি ইউএনওদের নিয়ে সারা দেশে এক অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মসৃণ সরকারি ব্যবস্থাপনার বদলে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল ও ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ চরিতার্থ করাই স্থানীয় প্রশাসনের কাজ হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন করে স্থানীয় প্রশাসনে নিয়োগ বদলির আলোচনা চলছে। সব জেলায় একসাথে বড় রদবদল করতে পারে সরকার। এ অবস্থায় সারা দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এর সুযোগ নিয়ে দেশে যাতে কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক হতে হবে। নতুন করে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের মেধা যোগ্যতার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় প্রশাসনে যারা অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন, সরকারের অবৈধ কাজের সহযোগী হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশকে নতুন করে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হলে স্থানীয় প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। এ কাজে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব কিংবা দুর্বলতা যেন সরকারের ওপর ভর করে না বসে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। আমরা আশা করব, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকার এ কাজ সম্পন্ন করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা