২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
স্বৈরাচার হাসিনার হাতে রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস

সংস্কারে সবার সমর্থন প্রয়োজন

-

স্বৈরাচারী সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ থেকে প্রতিকার পায়নি। প্রথমে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মানবাধিকার হরণ করা হয়। পরে অধিকার হরণের তালিকায় সরকারের নিজস্ব পছন্দের কিছু মানুষ ছাড়া বাদবাকি সবাই রাষ্ট্র্রীয় নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন।
আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এমনি ক্ষয়ে যায়নি। ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে এক ব্যক্তির ইচ্ছার অধীন করা হয়। এখন দেশ এমন এক অরাজক অবস্থায় পৌঁছেছে; রাষ্ট্রকাঠামো প্রায় পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কূটনীতিকদের সাথে আলোচনায় ভেঙে পড়া কাঠামোর কথা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। এরপর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হবে। ড. ইউনূসের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই আমরা।
মানুষের শেষ ভরসা বিচারালয়কে পীড়নের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে বিচার বলতে কিছু অবশিষ্ট ছিল না। উচ্চ আদালতের অনেক বিচারক হয়ে উঠেছিলেন সরকারের অনুগত চর। বিচারকদের মধ্য থেকে এমন অবিবেচকও ছিলেন; যারা ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ হিসেবে উৎসাহের সাথে ঘোষণা দিয়েছেন। একজন বিচারক এজলাসে বসে মন্তব্য করেছিলেন, ‘ট্রুথ ইস নো ডিফেন্স’। হাসিনা যখন বিরোধীদের ওপর গুম, খুন ও পীড়নের স্টিমরোলার চালান; তখন বিচারকের আসনে বসে চলছিল বিচারের নামে প্রহসন। বিচারের নামে হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনা অনুযায়ী ফয়সালা।
সাবেক প্রধান বিচারপতি খাইরুল হক কলমের এক খোঁচায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেন। যার সুবিধা নিয়ে হাসিনা তিনটি প্রহসনের নির্বাচন করে বিনাভোটে সরকার গঠন করেন। কত শত মানুষ গুম খুনের শিকার হয়ে এই কথিত বিচারকদের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাননি। এভাবে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি নিজের আজ্ঞাবহ করেন হাসিনা। বিগত ১৫ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল হাসিনার কৃতকর্ম বৈধ করতে রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহার হওয়া।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের সর্বস্তরের নির্বাচনে সরকারের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির হেন কোনো উপায় নেই, যা সরকারি দল করেনি। দুদকের কাজ ছিল দুর্নীতিপরায়ণ ক্ষমতাসীনদের সনদ বিতরণ করা। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাকে এ সনদের ব্যবস্থা করত দুদক। দেশে ঘটা সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়ম ও মুদ্রা পাচার নিয়ে সংস্থাটি চোখ বন্ধ করেছিল। অন্য দিকে বিরোধী লোকজন দমনে ব্যবহৃত করা হয়েছে একই প্রতিষ্ঠানকে। এখানে থেমে থাকেনি, সংস্থাটির ভেতরে সৎ কর্মকর্তাদের নানাভাবে দমন-পীড়ন হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্য দিকে কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। কেউ কেউ ধরাও পড়েন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাজ ছিল সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে সাফাই গাওয়া। এভাবে দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নাগরিকদের বিরুদ্ধে পীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করেছিলেন হাসিনা।
সব প্রতিষ্ঠানকে কলুষিত করে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করা দীর্ঘ জটিল প্রক্রিয়া। পৃথিবীর অনেক দেশ এ ধরনের সংস্কার করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা রাখব, বাংলাদেশের সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এই বিপুল কর্মযজ্ঞ করতে গিয়ে দেশবাসীকে পাশে পাবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও সমর্থন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সমাধা করতে সক্ষম হবে। বিপ্লবী ছাত্রসমাজও সমর্থন দিয়ে এ কাজ সম্পাদনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।


আরো সংবাদ



premium cement