২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
এক প্রকল্পেই ৬০ হাজার কোটি লোপাট

ফেঁসে যাচ্ছেন হাসিনা

-

পতনের পর স্বৈরাচারী হাসিনার অপকর্মের সব খতিয়ান সামনে আসতে শুরু করেছে। নৃশংসভাবে ভিন্নমত দমন, প্রতিহিংসার রাজনীতি, নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার কূটকৌশল এতদিন দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্নীতি অনুমান করা গেলেও প্রামাণ্য তথ্য প্রকাশের সাহস কেউ দেখাননি। এমনকি বিদেশী মিডিয়াও জেনেশুনে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে।
অন্য দিকে শেখ হাসিনা নিজের ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে প্রায়ই মিডিয়ায় এমন বক্তব্য দিতেন, ‘জাতির জনকে’র কন্যা কখনো দুর্নীতি করে না। যত দুর্নীতি সব করেছে বিএনপি ও তার নেত্রী। মাত্র তিন কোটি টাকা নয়ছয় করার মিথ্যা অভিযোগে বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রেখে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে।
দেশ ছেড়ে পালানোর পর হাসিনার আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রথম খবরে জানা যাচ্ছে, শুধু রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা (৫০০ কোটি ডলার) আত্মসাৎ করেছেন। এতে সহায়তা করেছেন ছেলে জয় এবং ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী। দেশের একক বৃহত্তম এ প্রকল্প থেকে হাসিনা, জয় ও টিউলিপ কিভাবে এত বিপুল অর্থ লোপাট করেছেন তার বিস্তারিত প্রকাশ করেছে দুর্নীতির অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন।
এই প্রথম শেখ হাসিনার আর্থিক কেলেঙ্কারির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলো। তবে এটি প্রথম নয়। এক-এগারোর সরকারের সময় হাসিনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চাঁদাবাজির মামলা হয়। অনেকে জানেন, এক-এগারোর সরকার শুধু এক নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার ঝুঁকি না নেয়ার জন্য হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা সাজিয়েছিল। ২০০৯ সালে পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে হাসিনা সবার আগে নিজের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নেন। আর খালেদা জিয়ার মামলা জিইয়ে রেখে তাকে শাস্তি দেন।
হাসিনা যে ধোয়া তুলসী পাতা নন, তা নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি একের পর এক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন এবং বিপুল বাড়তি ব্যয়ে সেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়ন করেছেন। এতে প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
প্রকল্পগুলো সমালোচনার মুখে পড়েছে। কিন্তু দেশের মিডিয়া প্রকাশের সাহস করেনি। আইন করে জ্বালানি খাতের প্রকল্পে দায়মুক্তি দেন হাসিনা।
হাসিনা যে দুর্নীতিগ্রস্ত তা তার কথা থেকে স্পষ্ট হয় অনেক আগে। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনে হেরে বিদায় নেয়ার সময় সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, ঠিক আছে, আপনারাই খান, আমাদের দরকার নেই। এ কথার অর্থ হলো, রাষ্ট্রক্ষমতাকে তিনি নিছক খাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখেন, দায়িত্ব হিসেবে নয়। তিনি এত বেশি খেয়েছেন যে, এখন বদহজম শুরু হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন দায়মুক্তির কালো আইন স্থগিত করেছে। ধারণা করা যায়, এমন ঘুষ, তছরুপের আরো খবর শিগগির সামনে আসবে। তবে সরকারিভাবে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করা দরকার।
আমরা জ্বালানি খাতের প্রতিটি দুর্নীতি এবং হাসিনার নির্দেশে, মদদে এবং সহায়তায় গত ১৫ বছরে দেশে যত দুর্নীতি হয়েছে সবগুলোর তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। দুর্নীতিবাজদের এমন শাস্তি দিতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এসে কেউ আর দুর্নীতি করার সাহস না পান।


আরো সংবাদ



premium cement