২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কারিগরদের পরিচয়

রুখতে হবে দেশবিরোধী শক্তি

-

ক্ষমতার লোভে মানুষ কত উন্মাদ হতে পারে তার উদাহরণ আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। হত্যা, খুন, গুমসহ যতভাবে মানুষকে পীড়ন করা যায় তা সব করেন হাসিনা দেশ থেকে পালানোর আগে। এখন তার সব কুকীর্তি প্রকাশ পাচ্ছে, যেগুলো নজিরবিহীন। শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তিনি দেশ ধ্বংসের খেলায় মেতেছিলেন। গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ দেশরক্ষা বাহিনীকে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার সেসব অভিযোগ করছেন। এত দিন তারা প্রাণভয়ে প্রকাশ্যে বলার সুযোগ পাননি। ৫ আগস্ট বাংলাদেশ নবজন্ম লাভ করেছে। সুবর্ণ সুযোগ এসেছে নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের। এখন দেশের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে; যাতে এ ধরনের উন্মাদের হাত থেকে ভবিষ্যতে দেশ রক্ষা পায়।
‘পিলখানায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা’ এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন। তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক নিহত মেজর জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ দাবি করেন- হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশী একটি রাষ্ট্রের সাথে ষড়যন্ত্র করে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ বেসামরিক নাগরিক হত্যা করেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের নামও প্রকাশ করেন। হত্যার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার যাতে মুখ না খোলে সে জন্য ক্রমাগত হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে বিচারের নামে চলা প্রহসন মানেন না বলে জানান রাকিন। নতুন করে তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ওই সময় যারা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাসিনার রোষানলে পড়েন তাদের কথা গুরুত্বের সাথে স্মরণ করা হয়। ওই ঘটনার রেশ ধরে সামরিক বাহিনীর সম্ভাবনাময় কর্মকর্তাদের ওপর আবারো ভয়াবহ পীড়ন নেমে আসে। যারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন, প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন, তাদের ওপর হাসিনা সরকার দানবীয় কায়দায় চড়াও হয়। কাউকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, কাউকে জেলে যেতে হয়। এর সূত্র ধরে সামরিক বাহিনীতে গুমের ঘটনাও ঘটে। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বিদেশে চলে যান। রাকিন এসব দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে স্মরণ করেন।
বর্তমান সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে বঞ্চনার শিকার প্রত্যেক সেনা কর্মকর্তাকে নতুন করে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া। পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে হাসিনা দলীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন। বহু নিরীহ নিরপরাধ ব্যক্তিকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। জওয়ানদের একটি অংশের ওপর নেমে এসেছিল অমানিশা। দেশে পুলিশি বাণিজ্যের যে অভয়ারণ্য কায়েম করা হয়েছিল এখানেও দেখা গেছে তার ছোঁয়া। বহু জওয়ানকে দিতে হয়েছে বিপুল ঘুষ। তার পরও নিস্তার মেলেনি অনেকের। এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে একে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রথমে সামরিক বাহিনীর দক্ষ সৎ ও যোগ্য অফিসারদের হত্যা করে ফায়দা নেয়া হয়েছে। এরপর নিজেদের ইচ্ছামতো তদন্ত করে আরেক দফা সুযোগ নেয়া হয়। তবে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে করা তদন্তটি প্রকাশ করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে। তারা আরো স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে মোট সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো বাস্তবায়ন করলে আশা করা যায়, পিলখানা ট্র্যাজেডির ক্ষত নিরসনের পথে অগ্রসর হওয়া যাবে।
নতুন রাষ্ট্র নির্মাণে পিলখানা ট্র্যাজেডিকে গভীরভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব রক্ষায় এর বিকল্প নেই। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখতে রুখতে হবে দেশবিরোধী শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়া। এখনই সময় রাজনৈতিক দলগুলোর এ বিষয়ে অঙ্গীকার করার।


আরো সংবাদ



premium cement