প্রকৃতির প্রতিশোধ
- হাফসা সারোয়ার রুনী
- ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আমাদের কারো কি কাম্য ছিল এমন এক কাল, এমন পরিবেশ, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কঠিন এক অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবো আমরা? স্বাধীনতার সুদীর্ঘ সময়ে এ দেশের মানুষকে এমন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন আর কখনো হতে হয়নি। এ কী কঠিন অবস্থা! শ্বাসরুদ্ধকর! মানুষের জীবন কি এমনই তুচ্ছ জ্ঞান! প্রতিটি জীবন মূল্যবান। এর পেছনে থাকে অনেক গল্প, শত সহস্র স্বপ্ন, মা-বাবার ঘাম ঝরানো তিল-তিল করে গড়া জীবনের অনেক কাহিনী। কোন স্বাধীনতা তাহলে আমাদের অর্জিত হলো? জীবন যেখানে এমন মূল্যহীন।
হাজারো মানুষের প্রাণ চলে গেছে আরো কত যে গুম, খুন, আহত তার হিসাব অজানা। এরা আমাদের মাটিতে বেড়ে ওঠা আমাদের সন্তান, আমাদের ভাই আমাদের বোন। ট্রমার মতো বোধ করছি- যখন হঠাৎ চোখে পড়ল ছেলেটা বলছে ‘ভাই আমি বোধ হয় মরে যাবো।’ সাথের ছেলেরা বলল- না আপনি মরবেন কেন? সাথে সাথে ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। প্রথম নিহত হওয়া ছাত্র আবু সাঈদ দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে ছিল কোটা সংস্কার দাবিতে। তার হাতে তো অস্ত্র ছিল না। একেবারে কাছ থেকে গুলি করা হলো। সে প্রথম বুঝতেই পারেনি এভাবে তাকে মেরে ফেলা হবে। সে ছিল গরিব বাবার তুখোর মেধাবী সন্তান। টিউশনি করে বাড়িতে চালকেনার টাকা পাঠাত। মুগ্ধ পানি কিনেছিল নিজের টাকায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিলিয়েছিল। তাকে জীবন দিতে হয়েছে। নিরস্ত্র এক ছেলে জীবন বাঁচাতে জানালার শেডে বসেছিল। তিনজন পুলিশ দৌড়ে এলো দু’জন হাতের পিস্তল দিয়ে পরপর গুলি করল সে সেখানেই মৃত্যুবরণ করল। এ দৃশ্য যারা সেদিন দেখেছে, সেদিন রাতে বহু মানুষ কষ্টে অনিন্দ্রায় কাটিয়েছে। এভাবে অনাকাক্সিক্ষত যেকোনো মৃত্যুতে প্রতিশোধ স্পৃহা জাগে।
এত মৃত্যু, এত ধ্বংস, এত মায়ের বুক খালি পুরো দেশ হতবিহ্বল। কেন এ অমানিশা? ক্ষোভ এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। আন্দোলন চলাকালে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠে যে অধিকার নিয়ে আন্দোলন; বিসিএসের মতো পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কী? উঠে আসে টাকার বিনিময়ে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র এবং পিএসসির কর্মচারীদের অনিয়ম অপকর্ম। একজন সামান্য ড্রাইভার হয়ে যান বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক।
দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া কষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন দেনা- আত্মহত্যারও পথ বেছে নিচ্ছে মানুষ। অথচ মাথা তুলে কথা বলতে পারছে না। সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। অফিস আদালতে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ আগানো অসম্ভব। বিরোধী দলের ওপর হাজার হাজার মামলা-হামলা হয়রানি কোথাও ন্যায়বিচার নেই। কোথাও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, তাহলেই দমন-পীড়ন। ভোটাধিকার প্রয়োগে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কারণ দিনের ভোট রাতে সেরে ফেলার মতো নানা কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এমন কেন্দ্রও দেখা গেছে ভোটার সংখ্যার চেয়ে ব্যালটে বেশি সিল পড়েছে। নির্বাচন জনগণের মৌলিক অধিকার। আগে নির্বাচন ঈদ উৎসবের মতো সংঘটিত হতো।
সাবেক সেনাপ্রধান আবদুল আজিজ এবং র্যাবপ্রধান বেনজীর যাদের অপকর্ম দিবালোকের মতো স্পষ্ট। উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অপরাধী হলে অধীনস্তরা কী করবে? বেনজীর বিশাল অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করল, বিলাসবহুল বাড়ি, রিসোর্ট, কয়েক শ’ বিঘা জমির মালিক তিনি। ব্যাংকের চেক ভাঙিয়ে ১০০ কোটি টাকা নিয়ে সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেল। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে রাষ্ট্রের এ জঘন্য অপরাধী কিভাবে পালিয়ে যায়?
এভাবে বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে দেশ। এ দেশে অনেক কিছু হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্ট থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ, অর্থ, বৈদেশিক মুদ্রা লোপাট হলো তার হদিস পাওয়া গেল না। বিমানবন্দরের কারগো ডিপার্টমেন্টের আলমারি থেকে ৫০ কেজির উপরে স্বর্ণের বার উধাও হলো। এ দেশে এমন ঘটনা কি মানুষ আগে শুনেছে? তার সুরাহ হলো না।
খেলাপি ঋণ, বিভিন্ন অনিয়ম এবং তারল্য সঙ্কটে ব্যাংক মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারের বড় বড় প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতায় নানা অনিয়ম এবং খরচের পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে গেছে। উচ্চতর প্রশাসন থেকে করাপশন এমনভাবে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে, আজ পুরো রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গুম-খুনে মানুষ দিশেহারা। এ দুঃশাসন প্রায় ১৫ বছর। বহু সংগ্রাম প্রচেষ্টা হয়েছে, মানুষ মুক্তির পথ যেন ভুলেই বসেছিল। এত জুলুম, নির্যাতন অথচ কে নামাবে তাকে? শেখ হাসিনা নিজের কথার ফাঁদে নিজেই পড়লেন। স্বৈরশাসকদের পরিণতি এমনই হয়। একেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। স্রষ্টার ইশারা। মনীষীদের বাণী রয়েছে- যেকোনো অন্যায় নৃশংসতা মানুষ ভুলে গেলেও প্রকৃতি তা ভোলে না। একদিন সে প্রতিশোধ নেবেই। দীর্ঘ ২৫ দিনের শ্বাসরুদ্ধকর এ আন্দোলনে কিছুতেই তিনি ক্ষমতাচ্যুত হবেন না। আর প্রতিদিন ঝরেছে অজস্র প্রাণ। অবশেষে জনরোষে, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। বহু প্রাণের বিনিময়ে আবার মুক্ত হলো দেশ। মানুষ হাঁফ ছেড়ে মুক্ত বাতাসে হাঁটতে পারছে। এমন বিজয় উল্লাস এ জাতি বহুদিন দেখেনি। এত মানুষের প্রাণের দায় কি পালিয়ে যাওয়া? দেশকে এখন সুসংহত করতে হবে। ঐক্য এবং ত্যাগই একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা