২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের আটক করুন

প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হোক

-


দেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এ সময় একটি সঠিক সিদ্ধান্ত যেমন দেশকে বহুদূর এগিয়ে দিতে পারে, তেমনি একটি ভুল ইতিবাচক রূপান্তরকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করতে পারে। সদ্য বিদায়ী ফ্যাসিবাদী শাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। এই দু’টি বিষয়ে যদি সফলভাবে অন্তর্বর্তী সরকার উত্তরণ ঘটাতে পারে, বাংলাদেশ একটি মানবিক দেশে রূপান্তরের পথে সহজে অগ্রসর হতে পারবে। তাই যত খুন-গুম, পীড়নের ঘটনা ঘটেছে প্রতিটির প্রতিকার করতে হবে। অভিযুক্ত হাসিনা ও তার দোষর সবার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে হাসিনার নেতৃত্বে যে গ্রুপটি সারা দেশকে লুটপাট চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া অর্থসম্পদ উদ্ধার করতে হবে। এটি জটিল ও বিস্তৃত একটি কাজ। এ জন্য দক্ষতা সততা গভীর দেশপ্রেম প্রয়োজন। দেশবাসীর আশা, অন্তর্বর্তী সরকার কাজটি সফলভাবে সম্পাদন করবে।

ইতোমধ্যে হাসিনা ও তার খুনি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদের একটি অপরিহার্য উপাদান ছিল তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বহু গুপ্ত বাহিনী যুক্ত করা হয়েছিল। যখন কোনো আন্দোলন সংগ্রাম দানা বেঁধেছে গুপ্ত বাহিনীকে রাস্তায় দেখা গেছে। এরা আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ছাতার নিচে এই অপকর্ম করেছে। তাদের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে।
আন্দোলনকারীদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে এরা। করেছে নাশকতা। আসলে হাসিনার নেতৃত্বে দেশে মগের মুল্লুক কায়েম হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ পেত এসব দুষ্কৃতকারী। সরকারের দায়িত্ব সারা দেশ থেকে এদের খুঁজে বের করা। তাদের শনাক্ত করা না গেলে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা শঙ্কায় থেকে যাবে। একই সাথে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। নিরাপত্তাবাহিনীর বিপুল অস্ত্র খোয়া যাওয়ার খবর জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর কিছু সদস্য আন্দোলন দমানোর স্বার্থে সরকারি অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছে, সে খবরও আছে। জরুরি ভিত্তিতে সন্ত্রাসী ও তাদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।

দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করাও জরুরি কাজের একটি। তাদের মধ্যে হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। কারো হিসাব তলব করা হয়েছে। হাসিনার কোষাগার রক্ষক হিসেবে পরিচিত এস আলম একা ইসলামী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৫০ হাজার কোটি টাকা। গুটিকয় ব্যক্তি ব্যাংক লুট করে কয়েক লাখ কোটি টাকা হাতিয়েছেন। তাদের বিভিন্ন স্তরে থাকা লোকজন বিগত এক যুগে বছরে এক লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এ অর্থ উদ্ধার করা এবং এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে।

স্বল্প সময়ে হাসিনার পতন হওয়ায় বেশির ভাগ অপরাধী দেশ ছেড়ে পালাতে পারেনি। আশা করা যায়, সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হবে। সম্ভাব্য অপরাধীদের দেশ থেকে পালানো এবং ব্যাংক থেকে অর্থ সরিয়ে নেয়া ঠেকাতে হবে। এ জন্য প্রত্যেকটি বন্দরে তাদের নামের তালিকা থাকতে হবে। যাদের নাম তালিকায় উঠানো হয়নি জরুরি ভিত্তিতে সেসব নাম তালিকায় যুক্ত করতে হবে। সব অপরাধীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে হবে, যাতে দুর্নীতি করে উপার্জিত অর্থ আর পাচার করতে না পারে।

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement