২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দোয়ারাবাজারে শিক্ষার্থীদের রাস্তা সংস্কার

উদ্যোগটি সত্যি প্রশংসনীয়

-


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা অভূতপূর্ব দেশপ্রেম এখন সবার কাছে উদ্ভাসিত। তারা যেমন রাষ্ট্রীয় সংস্কার চান; ঠিক তেমনি নিজ নিজ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দুঃখ-কষ্ট নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রসমাজ নানা জায়গায় প্রশংসনীয় কাজ শুরু করে দিয়েছে। তেমন একটি উদ্যোগের কথা জানা যায় নয়া দিগন্তের দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।

নয়া দিগন্তের খবর অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সবজিভাণ্ডার-খ্যাত জনবহুল বাংলাবাজার এলাকার সাথে উপজেলা সদর ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনের যোগাযোগের প্রধান সড়ক ব্রিটিশ-বাংলাবাজার রাস্তাটি দুই যুগের বেশি সময় ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে ছিল। বেহাল অবস্থায় থাকায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় কাদাপানি, খানাখন্দ আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এ পথে চলাচল করতে হতো এলাকাবাসীকে। এতে বাংলাবাজারের উৎপাদিত সবজি বাইরের এলাকায় পাঠাতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হতো চাষিদের। ফলে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাওয়ার মতো অবস্থা হয় তাদের।

এ রাস্তা দিয়ে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজ, দু’টি মাদরাসার ছাত্রছাত্রী এবং তিনটি বাজারে মানুষের নিয়মিত চলাচল করতে হয়। এলাকার মানুষ রাস্তা সংস্কারে মানববন্ধন করে কয়েক দফা দাবি জানালেও জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার। এতে দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে। বাস্তবে এ পথে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা ছিল না।

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন নিজেদের পরিবর্তন নিজেরা করবেন এই অঙ্গীকারে। যেমন কথা তেমন কাজ- শুরু হয় খানাখন্দে ভরা রাস্তা সংস্কারকাজ। রাস্তাটির খানাখন্দ ভরাট, পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করা, কাদা সরিয়ে ভাঙাচোরা ইট দিয়ে সড়কের গর্ত ভরাটসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে ছাত্রদের স্বেচ্ছাশ্রমে। এতে উপজেলার ব্রিটিশ-বাংলাবাজার তিন কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর উপকারভোগী হবেন আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর অর্থায়ন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর পাঁচ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে গত মঙ্গলবার রাস্তার সংস্কারকাজ শেষ হয়।

রাস্তা সংস্কারে অর্থায়নকারী মোবারক হোসেন জানান, সরকারি অনুদান বা কারো অপেক্ষায় না থেকে ছাত্রদের নিয়ে নিজেরা রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করি। আমরা একাধিকবার মানববন্ধনসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের শরণাপন্ন হয়েছিলাম, তবু সংস্কার হয়নি। তাদের দাবি, দ্রুত স্থায়ীভাবে সংস্কার করে সড়কটি মানুষের চলাচলের উপযোগী করে তোলা হোক। এলাকাবাসীর বক্তব্য, শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে সড়ক সংস্কার করেছেন। এটি সাময়িক উদ্যোগ। রাস্তাটির স্থায়ী সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।
দোয়ারাবাজার এলাকাবাসীর মতো আমরাও মনে করি, সরকারের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সড়কটির স্থায়ী সংস্কার করে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে; যাতে ওই এলাকার জনসাধারণের দীর্ঘ দিনের অসুবিধা দূর হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে সবার প্রত্যাশা। কারণ সারা দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা এখন সরকার জনবান্ধব হবে।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement