২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভারতের সাথে বন্ধুত্বের প্রত্যাশা

ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সম্মান করতে হবে

-

ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক সংশয় সন্দেহ রয়েছে। বাংলাদেশে নির্বিচার দমন-পীড়ন চালানো এবং জনগণের সব অধিকার হরণকারী একটি দানবীয় সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের অব্যাহত সমর্থন দানের বিষয়টি মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করেছে। একনায়ক হাসিনার পালানোর পর এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না বাংলাদেশে শান্তি নিরাপত্তা ও স্থিতি ফিরবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার সাথে জড়িত কিছু আলামত মানুষ দেখতে পাচ্ছে যাতে ভারতের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। সোজা কথায়, এ দেশের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার হরণে আগাগোড়াই হাসিনা সরকারের সহযোগী ছিল ভারত। এ অবস্থায় মানবাধিকারের বিষয়গুলোতে ভারত বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিলেই বাংলাদেশের সাথে কার্যকর বন্ধুত্বের সূত্রপাত হতে পারে। দেশটিকে এই অঙ্গীকার স্পষ্ট করতে হবে যে, তারা নিজ দেশে যেভাবে মানবাধিকার সুরক্ষা দেয় বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় একইভাবে সমর্থন দেবে।
বিগত সরকারের আমলে অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করা গেছে, বন্ধুত্বের বাতাবরণে বাংলাদেশের মানুষের সাথে ভারত এক ধরনের শত্রুতা চরিতার্থ করেছে। হাসিনার সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা দেশটির শীর্ষ নেতারা যখনই একযোগে বলছিলেন- দুই দেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় উঠছে, তখনই তাদের পক্ষ থেকে এমন কিছু আচরণ হয়েছে যা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশের নাগরিকদের গুমের সাথে দু’দেশের এক অলিখিত সমঝোতা। এমন অন্তত দুটো ঘটনা বৈশ্বিক মানবাধিকারকর্মীদের আলোচনায় রয়েছে। জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের গুম ও পরে ভারতে পাচার এর একটি।
২০১৫ সালে দেশে হাসিনা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন তুঙ্গে। ধরপাকড়ের ফলে বিরোধী নেতারা কেউ আর প্রকাশ্যে আসতে পারছিলেন না। ওই সময় আন্দোলনের মূল মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছিলেন সালাহউদ্দিন। তাকে দুই মাস দেশে গুম করে রাখার পর ভারতের মেঘালয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। অসুস্থ বিধ্বস্ত সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সাবেক মন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, এ বিষয়টি ভারত সরকার জানত না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি মূলত বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসাধারণের একজন প্রতিনিধি হিসেবে মূল্য পাওয়ার কথা ছিল, যেহেতু ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সামান্য বিবেচনাবোধও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তখন দেখা যায়নি। কেবল হাসিনার পলায়নের দীর্ঘ ৯ বছর পর তিনি দেশটি থেকে ফিরতে পেরেছেন।
আরেকজন হলেন দেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। তাকে আদালতের চত্বর থেকে গুম করে ভারতে চালান করে দেয়া হয়। তিনিও দীর্ঘ পাঁচ বছর সে দেশে কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। এভাবে গুম হয়েও তারা ভারত সরকারের কাছ থেকে কোনো আনুকূল্য পাননি। এমনকি এসব নিয়ে দেশটির সরকার কোনো ধরনের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করেনি। সীমান্ত হত্যাসহ মানবাধিকার সংক্রান্ত আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আপত্তি আছে। মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে স্বচ্ছ তদন্ত করে বাংলাদেশকে সততার সাথে যতদিন না জানাবে ততদিন দেশটিকে আন্তরিকভাবে আমরা কিভাবে গ্রহণ করতে পারব? হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে আশকারা না পেলে দেশে আয়নাঘর সংস্কৃতি চালু করার সাহস পেত না বলে সাধারণ মানুষ মনে করে।
দানবীয় হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশীরা গভীরভাবে লক্ষ করছে। তারা হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, সরব রয়েছে শুধু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নে। একশ্রেণীর ভারতীয় মিডিয়া স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণকে কালিমালিপ্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা নিশানা করে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পদের ওপর হামলা হচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেকাররা এগুলো ভিত্তিহীন প্রমাণ করলেও তারা অপপ্রচার চালানোর নীতি অব্যাহত রেখেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেসব বিবৃতি দিয়েছে তাতে স্বৈরাচারী হাসিনার পতনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘দেশের মানুষ দিল্লিকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চায়।’ বাস্তবতা হচ্ছে- বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এই বিজয়কে ভারত এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। আমরা আশা করব এই অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন ভারত তোষণের পুরনো নীতি পরিবর্তন করে এবং বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সাথে বন্ধুত্ব তৈরিতে অগ্রসর হয়। ছাত্র-জনতার বিজয়ের মর্মকে কোনোভাবে যেন খাটো করা না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement