২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হিন্দুদের ওপর হামলার খবর

যার প্রায় সব উদ্দেশ্যমূলক

-

গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এই সরকার এখনো স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারেনি। এমন অবস্থায় রাজপথে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সবে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কা শেষ হয়ে যায়নি। শনিবার খোদ প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে বিচারিক অভ্যুত্থান ঘটানোর একটি ভয়াবহ চক্রান্ত ছাত্র-জনতা যথাসময়ে ভণ্ডুল করে দিয়েছেন। আদালত ঘেরাও করে হাসিনার অনুগত বিচারকদের পদত্যাগ করানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বিপদ শুধু এক দিকে নয়, চতুর্মুখী।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে সামনে আছে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু নির্যাতনের প্রচারণা। প্রায় শতভাগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক এ প্রচারণার লক্ষ্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকার। কিছু হিন্দুর ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে, যারা গত ১৭ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে লুটপাট করেছে, মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে এবং জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে। আসলে সমাজে তারা পরিচিত ছিল রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত হিসেবে। এর বাইরে একটি মন্দিরের বাইরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় জড়িত দু’জনকে আটক করা হয়। তারা স্বীকার করেছে, আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে তারা এ হামলা চালায়। অথচ প্রচারণা হচ্ছে, ঢালাওভাবে হামলার।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে লাগাতার মিথ্যাচার নীতি-নৈতিকতার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং বিবিসি, আলজাজিরার মতো প্রতিষ্ঠানও ফ্যাক্টচেক করে জানিয়ে দিচ্ছে হিন্দুদের ওপর হামলার তথ্য ও চিত্র ঠিক নয়; বরং বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থী এমনকি মাদরাসার ছেলেরা রাত জেগে হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পাহারা দিচ্ছে। যে দলটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা চালানো হচ্ছে সেই জামায়াতে ইসলামীর আমির স্বয়ং ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
এরপরও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুরা নিরাপত্তার দাবিতে মিছিল করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে কোনোভাবে যেন ঘি ঢালা না হয় সে দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের। হিন্দুরা যে মিছিল মিটিং করলেন, উত্তেজক ভাষায় কথা বললেন, তা জনমনে ছাত্র-জনতার কাছে ভিন্ন বার্তা দিতে পারে। সেটি কারো কাম্য হতে পারে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে লুট ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত সরকারকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তিনি এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আশা প্রকাশ করেন, সব ধর্মীয় পক্ষ সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে।
কিন্তু ১৫ বছর ধরে লুটপাট করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া আওয়ামী লীগের লোকজন বসে নেই। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গাড়ি পুড়িয়েছে, যা এর আগে বাংলাদেশে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ঘটেনি। বর্তমান নাজুক সময়েও হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সবাই প্রস্তুত। তাই তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় সহায়ক হয় এমন কাজ থেকে আমাদের সবাইকে বিরত থাকতে হবে- এটিই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।


আরো সংবাদ



premium cement