স্থিতি ফেরানো প্রথম চ্যালেঞ্জ
- ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এক আশাজাগানিয়া সরকার গঠিত হয়েছে। দীর্ঘ পীড়ন ও বঞ্চনার পর নতুন সরকারের কাছে অনেক ভালো একটি ব্যবস্থাপনা সবার প্রত্যাশা। বাস্তবতা হচ্ছে- বাংলাদেশ অনেকটা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে। বড় বড় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়নি ঠিক। তবে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা কাঠামো খুব দুর্বল হয়ে গেছে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব চাপে পড়েছে। একটি দেশের স্বাধীনতার বয়স অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে, কোনো ধরনের যুদ্ধ ছাড়া স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশে এমন বিপর্যয়কর নিরাপত্তা সঙ্কট বিরল। পতিত শাসক শ্রেণী কতটা অপরিণামদর্শী হলে একটি সাজানো দেশে এমন ভয়ঙ্কর পরিণতি নেমে আসতে পারে।
আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা জনগণের শত্রুতে পরিণত করেন। ভিন্নমত প্রকাশ ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের পুলিশ দিয়ে কঠোরভাবে দমানো হয়েছে। ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়াও তীব্রভাবে সারা দেশে পড়েছে। পুলিশের পোশাকে কেউ এখন নিরাপদ বোধ করছেন না। সারা দেশ থেকে একযোগে তারা উধাও হয়ে গেছেন। ভয়ে কাজে যোগ দিতে পারছেন না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য, ছাত্র, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ক্ষেত্রবিশেষে সেনাবাহিনীর আশ্রয় এখন তাদের নিতে হচ্ছে।
এই বাহিনীকে ফ্যাসিবাদী সরকার সংখ্যায় অর্থেবিত্তে ভাসিয়ে দিয়েছে। তার ওপর দুর্নীতির অবাধ লাইসেন্স দিয়েছিল। এমন সব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যা শুধু সামরিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজন, বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য।
পুলিশ বাহিনীতে জন্ম নেয় বেনজীর, হারুন ও বিপ্লবের মতো বেশ কিছু দানব। এখানে শেষ নয়, পুলিশের মধ্যে বিশেষ বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়। জুলাই বিপ্লবের আগে হাসিনার সময় আড়াই হাজার মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গুম হয়েছেন বহুজন। এ অবস্থায় একের পর এক নতুন নতুন বাহিনী গঠন করেন স্বৈরাচারী হাসিনা। এসব বাহিনীকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের নামে মূলত নাগরিকদের গুম-খুনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আয়না ঘরসহ নাম না জানা আরো গোপন কারাগার তৈরি করা হয়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দেশের মানুষের নিরাপত্তায় গঠিত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, ডিবি, এসবি- এগুলোর কোনোটি দেশ ও জনগণের নিরাপত্তায় হাসিনার আমলে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। এমনকি সীমান্ত রক্ষায় গঠিত বিজিবিকে (আগের নাম বিডিআর) দেশের নাগরিক হত্যায় ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্য এ কাজে হাসিনার সহযোগী হয়েছেন। র্যাবও পুরোপুরি জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই নাজুক অবস্থা।
আশার কথা- সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা এ শূন্যতা পূরণ করছে। তারপরও ঘটছে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। সারা দেশে যান নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ছাত্র ও সচেতন নাগরিকদের। এ ধরনের গুরুতর দায়িত্ব পালন ছাত্ররা উৎসাহী হয়ে করলেও কিছু ঝুঁকির দিক আছে। তাই অচিরে ট্রাফিক পুলিশকে সংগঠিত করে রাস্তায় নামাতে হবে। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আপাতত তাদের সাথে অংশীদার হতে পারে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে নজর দিতে হবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকে। তাদের মধ্যে থাকা সৎ কর্মকর্তারা কেন জনগণের পক্ষে কাজ করতে পারেননি তা খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে বিগত ১৫ বছরে খুন, গুম ও বিচার বঞ্চনার পাশাপাশি ভয়াবহ দুর্নীতি অনিয়ম মুদ্রা পাচার হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন বিস্তৃতি বিচার ও সংস্কার। তার আগে আইনশৃঙ্খলা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা না গেলে কাক্সিক্ষত পরের কাজগুলো বিলম্বিত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা