২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ড. ইউনূসের সরকারকে স্বাগত

দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুক

-

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে গড়ে ওঠা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ঝড়ে গত সোমবার স্বৈরাচারী সরকারের তখতে-তাউস উল্টে যায়। ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। অর্জিত হয় ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়। এটি গণবিপ্লব। তবে ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশ আজ এক গভীর ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে। এর সম্পূর্ণ দায় সদ্য পতিত একনায়ক হাসিনার, তার অবৈধ সরকার ও দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। ইতিহাসে চেঙ্গিস খাঁর মতো নৃশংস হত্যাকারী হিসেবে চিত্রিত হয়ে থাকবে তার নাম।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। পালিয়ে যাওয়ায় তাকে ১৯৮৯ সালে ক্ষমতা হারানো রোমানিয়ার স্বৈরশাসক নিকোলাই চসেস্কুর ভাগ্যবরণ করতে হয়নি।
ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমাতে হেন নিষ্ঠুরতা নেই যা করেনি হাসিনা সরকার। গত ৩৫ দিনে দলীয় পেটোয়া ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। তাতে শিশু-কিশোরসহ শত শত মানুষের প্রাণ ঝরে। বেশির ভাগই শিক্ষার্থী ও তরুণ-যুবক। ক্ষমতা ধরে রাখতে শেষ মুহূর্তেও মরিয়া ছিল রক্তপিপাসু হাসিনা। এ জন্য গণহত্যা চালাতেও দ্বিধা করেনি। রাজপথে জমাট বাঁধা প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার বুকের ছোপ ছোপ রক্ত সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। সাম্প্রতিক এ হত্যাযজ্ঞ এত বীভৎস যে, সবাই একে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করছেন।
এর পরও হাসিনার কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। শেষ রক্ষা হয়নি তার। বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ফেরাউন থেকে শুরু করে কোনো স্বৈরাচারই করুণ পরিণতি এড়াতে পারেনি। হাসিনাকেও একইভাবে বিদায় নিতে হলো। এটি বিশ্ব জাহানের নিপুণ কারিগর স্রষ্টার অমোঘ নীতি। তার হাতে সব ক্ষমতার নাটাই। তিনি যাকে চান তাকে ক্ষমতা দেন এবং যখন যাকে চান আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন।
হাসিনার নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ আজ যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এবং দেশকে উদ্ধারে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে। বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসসহ অন্য সব সদস্যকে আমরা প্রাণ ঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনায় তাদের সাফল্য কামনা করি। সাথে সাথে এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা যেন তৃণমূল থেকে ওঠা রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আস্থাভাজন একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন এটিই কাম্য। এটিই হবে তাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার।
দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক সরকারই তাদের ওপর ‘প্রভু’ হয়ে বসেছে। তাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে, এর কারণ, ‘স্বৈরাচার’ তৈরির অনিবার্য উপাদান এখনকার প্রশাসনিক ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ঔপনিবেসিক কাঠামো বলবৎ থাকায় আজকে আমাদের এই অবস্থা। সুতরাং সবার তরফ থেকে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রসংস্কার আমাদের কাক্সিক্ষত সামাজিক ন্যায়বিচার, সুশাসন ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারে। সঙ্গত কারণে সবার মতো আমাদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বপ্রথম শক্ত হাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। যাতে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসে। সেই সাথে ছাত্র আন্দোলনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে দায়ী তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করবে।


আরো সংবাদ



premium cement