২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জনতার আচরণে ক্ষোভ-বঞ্চনার আগুন

পুলিশকে দ্রুত সক্রিয় করুন

-

দানবীয় শক্তি উৎখাতে বাংলাদেশের তারুণ্য নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এর আগেও ছাত্ররা রাষ্ট্র মেরামতে নেমেছিল। হাসিনার খুনে বাহিনী তাদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করে। তবে সেই আন্দোলন তাদের প্রেরণা হয়ে আরো শক্তি নিয়ে ২০২৪ সালে ফিরে এসেছে। তারা দেখিয়েছিল কিভাবে আইন মেনে চলতে হয়। অপশক্তির রক্তপাতের মুখে ব্যর্থ হলেও এবার তারা সাফল্য পেয়েছে। এবারো তারা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে, আমাদের মনে আশা জাগাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ মুক্ত হলেও এই মুহূর্তে পুলিশ প্রশাসন অকার্যকর। হাসিনার পলায়নের পর পুরো ঢাকা শহরে পুলিশ অদৃশ্য হয়ে যায়। সড়কে যান নিয়ন্ত্রণকারী ট্রাফিক পুলিশও উধাও। অরক্ষিত মহানগরে যান চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখছে ছাত্ররা। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই তারা যান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। তারা সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখারও চেষ্টা চালাচ্ছে। গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে খোয়া যাওয়া মালামাল ফেরত এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে ছাত্ররা। রাস্তায় ছাত্রদের এই উপস্থিতি রাষ্ট্র-উদ্ধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে শান্তি ফেরাতে অচিরেই পুলিশি ব্যবস্থা সক্রিয় করতে হবে।
আশঙ্কার দিক হচ্ছে, এতদিন যারা জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছিলেন তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন জনগণ তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। কয়েকটি জেলায় তাদের ওপর মানুষকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। ফেনীর নিজাম হাজারী, বরিশালের সাদিক আব্দুল্লাহর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। একই ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালী, সাতক্ষীরাসহ আরো কয়েকটি জেলায়। ঘরের ভেতরে আটকে প্রাণহানিও ঘটেছে। এমত মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিগত সরকারের আমলে যেখানে পুলিশ মানুষের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়েছে সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে থানা। থানায় পিটিয়ে আগুন দিয়ে হত্যার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। পুলিশও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে উত্তেজিত জনতাকে হত্যা করছে। গত বুধবারের পত্রিকায়ও শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। দীর্ঘদিন বর্বরতার শিকার ক্ষুব্ধ মানুষকে শান্ত করতে হবে। এজন্য ছাত্র-জনতাকে প্রতিটি এলাকায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
মানুষকে বোঝাতে হবে, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। তাদের ওপর যে অবিচার হয়েছে তার প্রতিশোধ একই ধরনের অন্যায়ের মাধ্যমে নেয়া যাবে না। তাদের আশ্বস্ত করতে হবে, বঞ্চনার শিকার প্রত্যেকে অচিরেই প্রতিকার পাবে। এই নাজুক সময়ে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল রাখতে হবে, কেউ যেন উগ্র আচরণ না করে। কোনো স্বার্থান্বেষী চক্র তাদের ওপর হামলা চালিয়ে যেন অর্জিত বিজয়ের গায়ে কালি মাখাতে না পারে।
হাসিনার শাসনে ক্ষমতার উৎস ছিল ‘বন্দুকের নল’। তিনি শক্তি প্রয়োগ করে প্রায় সব কিছু আয়ত্তে নিতেন। তাই মানুষের মনে ক্ষোভের পাহাড়। মুক্তির মুহূর্তে সেই লাভাই নির্গত হচ্ছে। কিন্তু অপরাধীদের বিচার না করে নিজের হাতে শাস্তি দেয়া সভ্য সমাজের লক্ষণ নয়। সেটি অন্যায়।
যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পুলিশে ইতোমধ্যে নতুন নেতৃত্ব এসেছে। পুলিশের মধ্যে যারা দানবীয় শাসনের সহযোগী হয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে। পুলিশের বর্তমান পোশাকটি মানুষের কাছে ঘৃণা উৎপাদন করে। এ পোশাকও পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতে পুলিশের সাথে জনতার সম্পর্ক সহজ হবে।


আরো সংবাদ



premium cement