২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ভরা মৌসুমেও দেখা নেই ইলিশের

কারণ উদঘাটন করতে হবে

-

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তিন মাস সাধারণত ইলিশ মৌসুম হিসেবে পরিচিত। তবে এবার ভরা মৌসুমেও বড় ইলিশের দেখা নেই। জালে উঠছে শুধু জাটকা। জেলেদের সাগরযাত্রার খরচই উঠছে না। হতাশ রাঙ্গাবালী উপজেলার সমুদ্রগামী হাজার হাজার জেলে। সহযোগী একটি দৈনিকের রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া মাছ ধরার ট্রলারের মালিক আমানুর বলেন, ‘৬৫ দিনের অবরোধের পর সাগরে বোট (ট্রলার) পাঠিয়েছি। খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। যা মাছ পেয়েছে, তা বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। স্টাফ খরচসহ ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। ৬০ হাজার টাকা গচ্চা।’ আমানুরের ট্রলারের জেলে রাশেদ বলেন, ‘দুই মাস পর সাগরে নামছি। যে মাছ পাইছি, এতে আমাগো তেল খরচই হয় নাই’। মৌডুবি ইউনিয়নের জাহাজমারা স্লুইসঘাটে অবস্থিত লিমা ফিসের স্বত্বাধিকারী খোকন বলেন, ‘কাক্সিক্ষত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট ইলিশ, জাটকা, পোমা, লইটা, বৈরাগীসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে জেলেদের যাওয়া-আসার খরচ কিছুটা উঠছে। তা না হলে লোকসানের মুখে পড়তে হতো।’
সমুদ্রগামী জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠেছে গত ২৩ জুলাই। এরপর বুকভরা আশা নিয়ে সমুদ্রে নামেন জেলেরা। আশা ছিল, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। নামতে না নামতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। এক সপ্তাহে দুই দফায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। জারি হয়েছিল তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেতও।
কোনো কোনো জেলে ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। আবার ঝুঁকি নিয়ে কেউ কেউ মাছ ধরেছেন। তবে জেলেদের বেশির ভাগ আশাহত।
বড় ইলিশ কারো কারো জালে ভাগ্যক্রমে ধরা পড়ছে। ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির অন্য সব মাছ। কম থাকায় ইলিশের দামও চড়া। খুচরা এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকায় এবং জাটকা ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রাঙ্গাবালীতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮০৯ জন। অনিবন্ধিত জেলেসহ এ উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে সমুদ্রগামী জেলের সংখ্যা বেশি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে রীতি আছে, সেগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। ঋতু সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। ফলে ইলিশের মৌসুম কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তাই জেলেদের ‘একটু’ অপেক্ষা করতে হবে। বেশির ভাগ জেলে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় উৎপাদন বেড়েছে। আশা করছি, সামনে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।’ কর্মকর্তা আরো বলেন, নদ-নদীতে অসংখ্য ডুবোচর জেগেছে। ইলিশ চলাচলের গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। অবৈধ জাল ও দূষণে মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ইলিশের বংশবৃদ্ধির বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ভরা মৌসুমে ইলিশ না পাওয়ার কারণ নির্ণয় করতে হবে। কারণ নির্ণয় ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement