২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
হেফাজতে সমন্বয়কদের আন্দোলন প্রত্যাহার

এটি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য

-

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন আর কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে নেই। সামান্য একটি দাবি আদায়ের বিষয় নিয়ে আড়াই শতাধিক মানুষের জীবনহানি, হাজার হাজার মানুষের আহত ও পঙ্গু হওয়া, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর বেপরোয়া ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা দেশে-বিদেশে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে কি না স্পষ্ট নয়। তাদের কর্মকাণ্ডে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
কোটা আন্দোলনের নেতাসহ ছাত্রদের নির্বিচার ধরপাকড়, নির্যাতন অব্যাহত আছে। সারা দেশে ব্লক রেইড দিয়ে সরকারবিরোধী লোকদের ধরা হচ্ছে। অনেকে নিখেঁাঁজ হয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়- কোটা আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ককে বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি হাসপাতালের বেড থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা আদায় করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা পরিস্থিতি সামলে ওঠার ক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখবে কি না সংশয় রয়েছে।
গ্রেফতার এড়িয়ে থাকা একাধিক সমন্বয়ক এর মধ্যে ডিবি অফিস থেকে নাহিদ ইসলামকে দিয়ে পাঠ করানো ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা সামাজিকমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক লিখেছেন, সমন্বয়কদের আটক করে নির্যাতনের মুখে যে বিবৃতি দেয়ানো হয়েছে, সেটা কখনো জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি এটিকে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেয়া বক্তব্য বলে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সমন্বয়করা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান এবং তাদের ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন ঠেকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা সারা বিশ্বে এবং দেশবাসী তরুণসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
সরকারের ওপর মানুষের আস্থা কেন তলানিতে গেছে সেটি তাদের বুঝতে হবে। তাদের কথা জনগণ এখন আস্থায় নিচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অথবা নাশকতাকারীদের ওপর দোষারোপ, স্বজন হারানোর বেদনা তারা বোঝেন- এমন যত কথা বলা হচ্ছে কোনোটা মানুষ সহজভাবে নিচ্ছেন না।
অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকে মুখ্য দায়িত্ব নিতে হবে। আর সেজন্য সবার আগে বর্তমান মারমুখী অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের এনে সহায়তা দেয়া অথবা সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করে মানুষের মন ফেরানো যাবে না। একটি উপায় হতে পারে শীর্ষপর্যায় থেকে আন্তরিকতার সাথে ভুল স্বীকার করা। এ ছাড়া উসকানিদাতা নেতা ও মন্ত্রীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া, গ্রেফতার ছাত্র ও অন্যদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।
এটুকু না করলে সামনে পরিস্থিতির কেবল অবনতি হতে থাকবে। সবাই জানেন, হত্যার পরিণতি কখনো কারো জন্য ভালো হয় না। আর এ সত্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চেয়ে ভালো কেউ জানেন বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement