২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ফেনীতে বাঁধ ভাঙা-গড়ার খেলা

সরকারি টাকায় ছিনিমিনি খেলা নয়

-

ফেনীর মুহুরী-কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙা-গড়ার খেলা চলছে। সাত বছরে ১২২ কিলোমিটার এই বাঁধের ৭০ স্থানে ভাঙন ঘটেছে। একই স্থানে বারবার ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে গত ১৩ বছরে ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হলেও দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায়নি ফুলগাজী ও পরশুরামবাসী।
স্বাধীনতার পর থেকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হতো হাজারো মানুষ। এসব মানুষের জানমাল ও কৃষিসম্পদ বাঁচাতে মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর ওপর ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১১ সালে বাঁধের কাজ শেষ হলে পরের কয়েক বছর বন্যামুক্ত ছিলেন স্থানীয়রা। ২০১৩ সালে বাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে যায়। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তা মেরামত করা হয়। এরপর প্রতি বছর ভাঙে বাঁধের বিভিন্ন স্থান। ছয় বছরে মুহুরী নদীর ভাঙা বাঁধ মেরামতে পাউবোর খরচের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ২২টি স্থানে মেরামতে দুই কোটি ৪৪ লাখ, ২০১৯ সালে ১৫ স্থানে এক কোটি ৫০ লাখ, ২০২১ সালে ২১ স্থানে দুই কোটি ১৩ লাখ, ২০২২ সালে ছয় স্থানে ৭১ লাখ ও ২০২৩ সালে ৯ স্থানে মেরামতে এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। চলতি বছরে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত আটটি স্থান মেরামতের জন্য এক কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৭৭ স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বাঁধ সংস্কারে গত ৭ বছরে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবু ভাঙন রোধ করা যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, জলের টাকা জলেই গেছে। বাঁধ ভাঙনরোধ হয়নি, তাদের দুর্দশাও কাটেনি। বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন দেখা দেয়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ পেয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে রয়েছে মেসার্স কাশেম ট্রেডার্স, মেসার্স ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন, মেসার্স ইমেজ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাহ সুফি এন্টারপ্রাইজ। বিল পেতে ‘দীর্ঘ সময় লাগায় অন্য প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চায় না’ বলে জানান পাউবো ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: আবুল কাশেম।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। ভাঙনকবলিত স্থানসহ নতুন জায়গায় প্রতি বছরই বাঁধ ভাঙে। প্রতি বছর এসব ভাঙন মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বছর ঘুরতেই সে টাকা পানিতে ভেসে যায়। সমাধান না করায় প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, একই জায়গা বারবার ভাঙে। এর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। বন্যা হলে অসাধু কর্মকর্তার কপাল খুলে যায়। পাউবো কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ঠিকাদার যেনতেনভাবে মেরামত কাজ করেন। এ কারণে বারবার ভাঙছে। বাঁধে ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাশেম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, বাঁধের যেসব স্থানে মেরামত করা হয়, সেখানে ভাঙে না, নতুন জায়গায় ভাঙে। বলেন, বিল বাকি পড়ায় অন্যরা কাজ করতে চান না। পাউবো ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৩১ কোটি টাকার মুহুরী বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজ শুরু হলে শেষ হতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
বাঁধ ভাঙা-গড়া নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলা নয়। এ অর্থ জনগণের।


আরো সংবাদ



premium cement