গ্রেফতার সমাধান নয়
- ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
কারাগার অপরাধীদের সংশোধনাগার। একদিকে শাস্তি, অন্যদিকে তাদের বিবেক জাগ্রত করার তাড়না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে- আমাদের দেশে নিয়মনীতি এখন আর সেভাবে কার্যকর নেই। কারাগার হয়ে উঠেছে সরকারবিরোধীদের বন্দী রাখার জায়গা। ক্ষমতাসীনদের পছন্দ নয়; এমন ঘটনা ঘটলে অনেকের নতুন করে ঠিকানা হয় কারাগার । কোটা আন্দোলন ঘিরে হাজার হাজার লোক কারা প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হচ্ছেন। আন্দোলনে কার দায় কতটুকু তা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এমনকি সহিংসতায় কারা জড়িত তা-ও আমলে নেয়া হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ঢালাও অভিযোগ করা হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। আর পুলিশও তাদের ধরে নিয়ে আসছে। বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না কারাগারের ধারণক্ষমতা। ফলে কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার অনেক বেশি বন্দীর চাপে পিষ্ট এখন।
বর্তমানে কোটা আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো শহরে শত শত মানুষ গ্রেফতার হচ্ছে। গত বুধবরা পর্যন্ত ঢাকায় এক হাজার ৭৫৮ জন আর চট্টগ্রামে ৭০৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। আট দিনে সারা দেশে গ্রেফতার সাড়ে চার হাজার। আদালতে উপস্থাপনের পর তাদের ঠিকানা হচ্ছে কারাগার। আলামত যা, তাতে মনে হয়- আরো কিছু দিন গণহারে গ্রেফতার চালাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শেষ পর্যন্ত কত মানুষ আটক হবেন এখনই বলা যাচ্ছে না। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৫৪টি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে লক্ষাধিক। সারা দেশে অসংখ্য মামলা দায়ের এবং বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
কারাগারগুলো বন্দীদের চাপে আগে থেকেই জেরবার অবস্থা। গত বছরের শেষ নাগাদ দেখা য়ায়, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দী আটক রয়েছেন দেশের কারাগারে। দেশের কারাগারগুলোতে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬৮৮, বন্দীর সংখ্যা ৮৭ হাজার ৮১২। বেশ কিছু কারাগারে ধারণক্ষমতার তিন থেকে চারগুণ বন্দী আটক রয়েছেন। ঢাকায় বন্দী ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৪২১ জন, রয়েছেন ৩০ হাজার ৮১১ জন, চট্টগ্রামে ধারণক্ষমতা ছয় হাজার ৯৫০ জন, বন্দী রয়েছেন ১৭ হাজার ২৩৫ জন, রাজশাহীতে ধারণক্ষমতা চার হাজার ১৭৯ জন, বন্দী রয়েছেন ১৩ হাজার ৫৯৮ জন। একজন বন্দীর জায়গায় থাকছেন তিন-চারজন। বিগত ছয় মাসে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা আরো বেড়েছে। কোটা আন্দোলনের পর ঢালাও গ্রেফতারে কারাগারের পরিস্থিতি আরো শোচনীয় হয়ে উঠেছে। এমনিতে কারা প্রশাসনের অনিয়ম দুর্নীতি কারাগারের পরিবেশ দূষিত করে রেখেছে। তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত বন্দীর চাপ কারাগারে আটক ব্যক্তিদের আরো অমানবিক জীবনযাপনে ঠেলে দিচ্ছে।
কোটা আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছেন। সহিংসতার ঘটনাগুলো মূলত মানুষের দীর্ঘ পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। হতাহতের ঘটনা এর সাক্ষী। মূলত ছাত্র ও সাধারণ মানুষ আন্দোলনে হতাহত হয়েছেন। আর মামলা সাজানো হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিশানা করে। আদালতে তাদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। মূল বিষয় এড়িয়ে কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধীদের নতুন করে পীড়নের উপলক্ষ বানানো হয়েছে; যা ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।
আমরা মনে করি, সঙ্কটকে আগে ঠিকভাবে চিহ্নিত করা জরুরি। গণহারে গ্রেফতার করে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে ঢোকানোর নীতি কোনোভাবেই সমীচীন হবে না, এটি কোনো সমাধানও নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা