২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আসামি ধরার নামে বাসাবাড়িতে হামলা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে

-

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এই আন্দোলন এক ভিন্ন ধরনের চরিত্র প্রকাশ করে। ছাত্রদের দাবিদাওয়ার সাথে রাজনৈতিক দল ও অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষ সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ দেখা যায়। বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি তাদের জীবন ও সম্পদ আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সরকারি দলের লোকেরাও তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। তার নিয়ম-কানুন রয়েছে; কিন্তু বিরোধীদের ওপর আইন প্রয়োগের বদলে বেআইনি আক্রমণ দেশের জন্য ভালো হবে না।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামলা দায়ের, গণহারে আসামি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে চিরুনি অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে ৭১টি, চট্টগ্রাম মহানগরে ১৪টি এবং অন্যান্য জেলায় ৭৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সারা দেশে গ্রেফতার অভিযান চলছে। আটকদের বেশির ভাগ বিএনপি ও জামায়াতের। যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিরোধী দলকে নিশানা করে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে দুঃখজনক, বিরোধীদের বাড়িঘরে হামলা, সম্পদের ক্ষতিসাধন। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের ওপর চড়াও হচ্ছে পুলিশ। তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে, ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রোববার বিকেলে ঢাকা জেলা যুবদলের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদকের শ্বশুড়ের বাসায় অভিযান চালায় ২০-২৫ জন পুলিশ। তাদের সাথে ছিল এক থেকে দেড় শ’ অপরিচিত লোক। তার শ্বশুড় জানান, বাড়ির ফটক ভেঙে ঢুকে নিচে অফিস ভাঙচুর করে। পরে দ্বিতীয় তলায় ঘরে ঢুকে এসি, ফ্রিজ, ওয়্যারড্রোব, টিভিসহ বাসার সব আসবাবপত্র তছনছ করে। বাসার নিচে রাখা গাড়ি ও মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে। নগদ তিন লাখ ২০ হাজার টাকা ও দু’টি স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নেয়। সাভারেও একই কায়দায় পুলিশ ও অপরিচিত লোকদের সমন্বয়ে বাসাবাড়িতে অভিযানের খবর পাওয়া গেছে। সাভার পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের স্ত্রী জানান, তার স্বামী চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন। এ দিকে পুলিশের অভিযানের কথা শুনে তিনি বাসা ছেড়ে যান। পুলিশ গভীর রাতে ফটক ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে। বাসার সব আসবাবপত্র ভেঙে তছনছ করে। ৫২ ভরি স্বর্ণ, তিনটি মুঠোফোন, নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। সাভারের জালেশ্বরে এক বিএনপির সমর্থকের দুই ছেলেকে ধরে নিতে চাইলে বাধা দেয়ায় তার ছোট বোনকে পুলিশ নিয়ে গেছে বলে পরিবার জানায়। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। রোববার গাজীপুরের আশুলিয়া থানা বিএনপির এক নেতাকে বাসায় না পেয়ে তার ছোট ভাইকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য কয়েকটি ফাঁকা গুলি করা হয়। এ ঘটনাগুলো সব অবিকল এমনই ঘটেছে কি না নিশ্চিত না। তবে একই ধরনের ঘটনা আমরা লক্ষ করেছি সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়েও।
গণগ্রেফতার ও বাসাবাড়িতে অভিযান নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করা হোক। এগুলো দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য অশনিসঙ্কেত। এতে করে ব্যাপক আকারে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement