২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আজ ১০ মহররম পবিত্র আশুরা

সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান

-

হিজরি বর্ষের পয়লা মাস মহররম। এ মাসের ১০ তারিখ বিশ্ব মুসলিম যথাযথ মর্যাদায় পালন করে থাকে। মানব ইতিহাসে ১০ মহররম ঘটনাবহুল একটি দিন। তবে গত চৌদ্দশ’ বছরে কারবালার বিয়োগান্ত ও মর্মন্তুদ উপাখ্যান আশুরাকেন্দ্রিক আলোচনায় মূল প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে। তখনকার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান বিশ্ববাস্তবতার অনেক মিল থাকায় আশুরার দিবসে কারবালায় হোসেন রা:-এর শাহাদতের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা এতটুকুও কমেনি। সত্যের স্বার্থে শিশুপুত্র ও সহচরসমেত জীবন বিলিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের নজির রেখে গেছেন তিনি। তবু অত্যাচারী শাসকের অন্যায় চাওয়ার কাছে মাথা নত করেননি। তাই বেইনসাফি ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রাম করে যাওয়ার আহ্বান ও শিক্ষা হচ্ছে আশুরার প্রধান মর্মবাণী।
মুসলিম জাহানে প্রচলিত আছে, প্রাচীনকাল থেকে আশুরার পবিত্র দিনে আল্লাহ এমন অনেক ঘটনা সংঘটিত করেছেন, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা থাকা দরকার। অতীত থেকে নামাজ-রোজাসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিমাত্র আশুরা পালন করে আসছেন। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, আশুরার দিনটিতে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, এর মধ্যে আছে- প্রথম মানব আদম আ:-এর তওবা কবুল হওয়া, মহাপ্লাবন থেকে নূহ আ:-এর মুক্তি, সদলবলে অত্যাচারী ফিরাউনের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া এবং এভাবে মূসা আ: ও তাঁর অনুসারীদের মুক্তিলাভ, মাছের পেট থেকে ইউনূস আ:-এর পরিত্রাণ, ইবরাহিম আ:-এর জন্ম, কূপের অন্ধকার গহ্বর থেকে ইউসুফ আ:-কে উদ্ধার, ইয়াকুব আ:-এর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া, দাউদ আ:-এর তওবা কবুল হওয়া, ঈসা আ:-এর জন্ম এবং আকাশে উত্থান, আল্লøাহর কাছ থেকে রাসূল সা:-এর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমাপ্রাপ্তি প্রভৃতি। এ দিনে আইয়ুব আ:-এর দীর্ঘকালীন ও জটিল রোগমুক্তি এবং সুলাইমান আ:-কে রাজত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল। মহররম তথা আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান সবাই আল্লøাহতে সমর্পিত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকেন। তাদের প্রত্যাশা, আল্লøাহর রহমত ও বরকতের ফল্গুধারায় সিক্ত হওয়া। একটি নির্ধারিত তারিখে এসব সংঘটিত হওয়ায় এর মধ্যে আমরা বিশেষ মহিমা খুঁজে পাচ্ছি। এ আবেগের মূল্য মুসলমানরা মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করেন।
প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও কবি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর বলেছেন, ‘কতলে হোসাইন আসল মেঁ মর্গে ইয়াজিদ হ্যায়/ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ।’ (হোসেন রা:-এর হত্যাকাণ্ড আসলে ইয়াজিদের মৃত্যু, প্রতি কারবালার ঘটনার পরে ইসলাম প্রাণ ফিরে পায়) অর্থাৎ ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যানুসারী সাহসী সংগ্রামী হজরত হোসেন রা:-কে হত্যার মাধ্যমে মূলত অত্যাচারী-স্বেচ্ছাচারী ইয়াজিদের মিথ্যা ধ্যানধারণা তথা অন্যায়-অনাচারের পরাজয় ঘটেছে। কারবালার মতো করুণ উপাখ্যানগুলোতে অপরিমেয় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারের মধ্য দিয়ে ইসলামের অনুসারীরা তাদের আদর্শিক নবজীবন লাভ করেন। এভাবে যুগে যুগে ইসলামের অবিনশ্বর চেতনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
পবিত্র আশুরার শিক্ষা হলো- জীবনের সর্বস্তরে যেকোনো মূল্যে আল্লাহপ্রদ এবং রাসূল সা:-এর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ইসলামকে দুনিয়ায় আদর্শরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। মনে রাখতে হবে, সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের যথাসাধ্য প্রয়াসে আশুরা পালনের সার্থকতা নিহিত। যদিও আজ মুসলমানরা অনেকটা দিশেহারা। তাদের নিজেদের দুর্বলতায় পদে পদে লাঞ্ছিত অপমানিত হচ্ছেন। এ দিন তারা কুরআনকে আঁকড়ে ধরার শপথ নিতে পারেন। ত্যাগের সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের শপথ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর অবমাননা ও লাঞ্ছনাকর জীবনের উত্তরণ ঘটতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement