০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
পুঁজিবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা

আস্থা ফেরানোর বিকল্প নেই

-

দেশের পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশীরা। এতে বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ বা পোর্টফোলিও বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রায় ৭৭ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ পুঁজি তুলে নিয়েছেন বিদেশীরা। তাদের পুঁজি তুলে নেয়ার এ প্রবণতা আজকের নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ইতিবাচক ছিল। এর পর থেকে চলছে ভাটার টান। ২০২০ সালে মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিলে পুঁজি তুলে নেয়ার এ প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।
গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, জুন মাসের প্রথম ২০ দিনে বিদেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ৫০০টিরও বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কমেছে ৮৩৭টি। বিও হিসাব হলো, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ব্রোকারেজ হাউজ অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব বা অ্যাকাউন্ট। এই বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন।
বর্তমানে ডলার সঙ্কট, টাকার মান পড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। তারা নিজ দেশে বিনিয়োগে বেশি রিটার্ন পান তখনই তারা পুঁজি তুলে নেন। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী আরো কোনো কোনো দেশে ঘটেছে বলে জানা যায়। তবে বাংলাদেশের মতো আর কোনো পুঁজিবাজারে এতটা অনাস্থা সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর শঙ্কা দেখা দেয়। তারা দেখছেন, টাকার মান কমে যাওয়ায় বেশি শেয়ার বিক্রি করেও তারা তুলনামূলক কম ডলার পাচ্ছেন। এ কারণে তারা পুঁজি তুলে নিচ্ছেন।
কেবল বিদেশী বিনিয়োগকারী নন, দেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন ফটকাবাজিসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারসাজির সব নানা কারণে। সৃষ্টি হয়েছে ভয়ানক আস্থাহীনতা।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুঁজিবাজারে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ আকর্ষণে ২০১৮ সালে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসাবে চীনের শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামের কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার বিক্রি করা হয়। ওই সময় ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হয়েছিল প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকায়। পাশাপাশি সে সময় চীনা কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে ডিএসইকে বেশ কিছু কারিগরি সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বড় ধরনের রদবদল করা হয়। কিন্তু এসব পদক্ষেপ থেকে তেমন কোনো সুফল আসেনি। ফলে দিন দিন পুঁজিবাজার ছেড়েছেন দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। এর পাশাপাশি এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। একের পর এক পুঁজি তুলে নিচ্ছেন।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে না পারলে অর্থনীতির বর্তমান নাজুক অবস্থায় পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা কম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ মনোযোগ দরকার। মূলত আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কোনো পদক্ষেপ কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারবে না।
পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement