০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
সরকারি নিয়োগে দুর্নীতির বিপুল বিস্তার

থামানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা এখনো নেই

-


বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তা এক কথায় বিস্ময়কর। সর্বনিম্ন পদ থেকে একেবারে সর্বোচ্চ পদ প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পর্যন্ত সব নিয়োগে জালিয়াতির খবর ফাঁস হয়েছে। সহযোগী একটি দৈনিকের এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, পুলিশ ক্যাডারে পরপর কয়েক বছরে দেশের বেশ কিছু জেলা থেকে কেউ নিয়োগ পায়নি। এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না যে, প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারেও একই চিত্র। বিপুল অনিয়মের দাপটে সরকারি প্রশাসন একেবারে মেধাহীন হয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। এর পরও সরকারি কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে কোনো ধরনের মাথাব্যথা দেখা যায় না।

সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগে বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাপক অনিয়মের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযোগ উঠলে সেটি খতিয়ে দেখার সংস্কৃতি দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোনো অপরাধী হাতেনাতে ধরা পড়লেও তার বিচার হওয়া নির্ভর করে সরকারের ইচ্ছার ওপর। এ সুযোগে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগেও যত সব অন্যায় হয়েছে সেগুলো নিয়ে যথেষ্ট তদন্ত হয়নি। অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হওয়া দূরে থাক; বরং হয়েছে প্রভাবশালী। সম্প্রতি সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক এক গাড়িচালকের দুর্নীতির খবর ফাঁস হওয়ার পর তারই প্রমাণ মিলছে। তিনি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। সরকারি গাড়ি চালানো ছাড়া তার অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য আয়ের উৎস ছিল না। এ দিকে তার সাথে সরকারি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের লোকদের ওঠা-বসার খবর মিলছে। তার সন্তানরা সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের পদ নিয়ে দাপটের সাথে চলেছেন।

৪০তম বিসিএসে পুলিশে ৭০ জন নিয়োগ পান। ওই তালিকায় ২৫ জেলার একজনও নেই। পরবর্তী দু’টি বিসিএসে পুলিশে ২০০ জন নিয়োগ পেয়েছেন। ৪২তম বিসিএসে বাদ পড়েছে ১৬টি এবং তার পরের বিসিএসে ১৪টি জেলা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশে নিয়োগে কয়েকটি জেলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একেবারে শীর্ষ পদে নিয়োগে এই সরকারের সময়ে জেলাগুলোর ব্যাপক প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে। সরকার যখন তার সুবিধার্থে কোনো অনিয়ম করতে চায়, স্বার্থান্বেষীরা সেটি আরো জোরালোভাবে কাজে লাগায়। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগে এ ধরনের অনিয়ম হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
সরকারি চাকরির নিয়োগে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে গেছে- আরেকটি দৈনিকের গতকালের একটি খবর উল্লেখ করলে আমরা বুঝতে পারব। জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রার্থী খুঁজতে এসেছেন এক যুবক। তিনি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাস করার পর পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রক্সি প্রার্থী সরবরাহের কাজ।

ইতোমধ্যে তিনি শিক্ষক নিবন্ধন, রেলওয়ের বিভিন্ন নিয়োগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি পরীক্ষাদাতা সরবরাহ করেছেন। নিজেও এ ধরনের তিনটি পরীক্ষায় অন্যের হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন। আমরা এই উদাহরণ টানলাম এ জন্য যে, সরকারি চাকরিসহ সব ধরনের পরীক্ষায় এ ধরনের অনিয়ম দেশে বহু ঘটছে। কোনো একটি অপরাধ তখনই বিস্তার লাভ করে যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হয়। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের অধঃপতন আমরা দেখছি। এখানে বিচারের ক্ষেত্রে আইন তার নিজস্ব গতিতে না চলে সরকারের ইচ্ছায় চলে। এ কারণে অন্যান্য সব ক্ষেত্রে বিপুল অবক্ষয়ের পাশাপাশি সরকারি নিয়োগেও সেটি ব্যাঙের ছাতার মতো বিস্তার লাভ করেছে।
সরকারি নিয়োগে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার বদলে অবাধ দুর্নীতি প্রাধান্য পেলে একসময় সরকারি প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে যাবে। সেই অবস্থায় রাষ্ট্র্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। তার পরও এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ এখনো সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement