০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
আয়-ব্যয়ের ফারাক আকাশ-পাতাল

সাধারণের কষ্ট লাঘব করবে কে

-

দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান ভালো নেই। তাদের আয় যেখানে ছিল সেখানে স্থির। অথচ ব্যয়ের তালিকা দীর্ঘ। আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় অনেক কিছু বিশেষ করে নিত্যপণ্যে কাটছাঁট করেও কুলাতে পারছেন না মুষ্টিমেয় ছাড়া বাদবাকি সবাই। কার্যত দেখা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে উচ্চমূল্যে স্থির, তা বহন করতে পারছেন না নি¤œবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এদিকে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি খরচ বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ অন্য সব খাতে। এর প্রমাণ গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি এবার। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশে। যদিও মূল্যস্ফীতির এ হার আরো বেশি বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিত্যপণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেজায় চড়া। গত বছরের এ সময়ে যেখানে প্রতি কেজি আলু ছিল ৩৫-৩৮ টাকা, এখন ৬৫-৭০ টাকা। বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ৯০-৯৫ টাকা, বর্তমানে ১০৫-১১০ টাকা। এক বছরে ডিমের দাম ডজনে পাঁচ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। মাঝারি চালের দাম গত বছরের এ সময়ে কেজি ছিল ৫০-৫৪ টাকা, এখন ৫৫-৬০ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজারদরের প্রতিবেদনও বলেছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সংস্থাটির হিসাবে, এক বছরে চালের দাম সর্বোচ্চ ৫ ও আলুর কেজিতে ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া মসুর ডাল কেজিতে সর্বোচ্চ ১৩, মুগ ডাল ৫০, ছোলা ৪৪, পেঁয়াজ ১৩৩, রসুন ৪০, আদা ৪১, এলাচ ৭১, হলুদের ৫১ শতাংশ দাম বেড়েছে। বাস্তবে সরকারের কোনো পদক্ষেপই নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে অনেকে সংসার চালাতে সঞ্চয় ভাঙে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ মূল চাকরির সাথে খণ্ডকালীন আরেকটি চাকরি করছেন। কাউকে মূল পেশার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করতে হচ্ছে। তবু সাংসারিক ব্যয় সঙ্কুলান করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, গতিহীন কর্মসংস্থানের চিত্র স্পষ্ট হলেও অদৃশ্য কারণে বাড়ছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। হঠাৎ বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের দাবি, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।
মানুষের আর্থিক কষ্টের মধ্যে বাড়বাড়ন্ত প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, প্রবৃদ্ধির যে চিত্র দেখানো হয়েছে, তা ধনীদের প্রবৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের নয়। কারণ তাদের আয়রোজগার বাড়েনি। বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে তাদের জীবন কষ্টে নিমজ্জিত।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার হয়তো কৌশলে উৎপাদন ও রফতানি বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। কম দেখাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। দেশের জন্য এই কৌশল মঙ্গলজনক নয়। এসব ভুল নীতির কারণে ধনীরা আরো সম্পদশালী হচ্ছেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো নিঃস্ব হচ্ছেন। পরিণতিতে সমাজে বাড়ছে দীর্ঘমেয়াদি বৈষম্য। তাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে ক্ষোভ। আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাষ্ট্রের উচিত, বৈষম্য দূর করে নিম্ন-মধ্যবিত্তের আয় বাড়ানোর পথ প্রসার ও সুগম করা। সেই সাথে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা।


আরো সংবাদ



premium cement