২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রফতানির অতিরঞ্জিত উপাত্ত সংশোধন

সরকারি সব তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ

-

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) অতিরঞ্জিত তথ্য সংশোধন করেছে। এতে দেখা গেছে, দুই অর্থবছরের ২০ মাসের রফতানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৩০ কোটি ডলার বেশি দেখিয়েছিল ইপিবি।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, রফতানির তথ্যে গরমিলের পেছনে সরকারের তিন সংস্থার সমন্বয়হীনতা ছিল। তথ্য প্রকাশে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারেনি। ভবিষ্যতে রফতানির তথ্য নিয়ে আর বিভ্রান্তি হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিভ্রান্তি সবসময় ছিল এবং জাতীয় পর্যায়ে বহু আলোচনাও হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থা দু’টির মধ্যে রফতানি আয়ের তথ্যে ফারাক ছিল ৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে এ পার্থক্য ছিল ২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার। তবে দুই সংস্থার রফতানি আয়ের তথ্যে গরমিলের পরিমাণ সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। একই প্রবণতা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। ব্যুরোর কর্মকর্তারা সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে এমন তথ্য-উপাত্ত ঘষামাজা করে বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করেন এমন তথ্য গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থা বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রকৃত তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ নেয়নি।
রফতানির যে অতিরঞ্জিত তথ্য ইপিবি প্রকাশ করে এসেছে সেটিও সরকারের ব্যর্থতা চাপা দিয়ে সাফল্য তুলে ধরার সজ্ঞান প্রয়াস বলে কেউ মনে করলে দোষ দেয়ার সুযোগ নেই। আইএমএফের ঋণ পাওয়ার মরিয়া চেষ্টায় সংস্থাটির শর্তের কাছে নতি স্বীকার করে ইপিবির তথ্য সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটিই বাস্তবতা। এ বাস্তবতায় না পৌঁছলে জাতি অন্ধকারে থেকে যেত। এর আগে রিজার্ভের প্রকৃত পরিমাণ নিয়েও একই রকমের বিভ্রান্তির কথা জানা গেছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) পরিসংখ্যানে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানির তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই একই সময়ে ইপিবি দেখিয়েছে, ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি হয়েছে। অর্থাৎ ইপিবি প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি রফতানির তথ্য দিয়েছিল।
ঘটনার যত ব্যাখ্যা দেয়া হোক, এ ঘটনা সরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানের প্রতি সব মহলের অনাস্থা সৃষ্টি করছে। এতে অর্থনীতির লক্ষ্য নির্ধারণ, নীতি প্রণয়নসহ সার্বিক বিষয়গুলো জটিল করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, প্রকৃত রফতানি কম হওয়ায় জিডিপির আকার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে সরকার যে বিপুল সাফল্যের তথ্য দিয়েছে সেগুলোও বাতিল হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ইপিবি ভুল তথ্য দিয়েছে। রফতানির তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে উল্লিখিত পরিসংখ্যানগুলো সংশোধন করা এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি। তা না হলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে যা, কোনোভাবেই শুভ হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement