২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাদ্যপণ্যের দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী

অধিকাংশ মানুষ দুশ্চিন্তায়

-

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি কোনো পদক্ষেপ কাজ করছে না; বরং জানা যাচ্ছে- গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে খাদ্যের দাম। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য, দেশে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। আর মাসিক ভিত্তিতে গত এপ্রিলে এটি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। এতে করে ৭০ শতাংশ মানুষ খাদ্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল।
এপ্রিলের পরও সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তার অবসান হয়নি। খাবার সংস্থানে তাদের অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ বাজার তদারকি প্রতিবেদন-এপ্রিল ২০২৪’-এর বরাতে একটি সহযোগী দৈনিকের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এপ্রিলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি এর আগের মাসের তুলনায় সামান্য (শূন্য দশমিক ৭) কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। তবে বেড়ে গেছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশে সরু চালের দাম প্রায় দেড় শতাংশ বেড়ে কেজিতে ৬০-৭৮ টাকা হয়েছে। মাঝারি ও মোটা চাল যথাক্রমে ৫২-৫৮ টাকা ও ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। খোলা আটা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও প্যাকেটজাত ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডব্লিউএফপির সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য, সাধারণ মানুষের প্রধান খাদ্যপণ্য চাল, গম, পামতেল ও আলু এবং মুরগির দাম বেড়েছে এপ্রিল মাসে। এ মাসে দেশে খাদ্য বাবদ মাথাপিছু খরচ হয়েছে দুই হাজার ৮৪৪ টাকা। বিশেষ করে চাল ও গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে খাদ্য বাবদ খরচ বেড়ে যায়। একই সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন। এপ্রিলে প্রতি চারটি পরিবারের তিনটির মাসিক খরচ বেড়ে যায়।
খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অবশ্যই দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের দুশ্চিন্তায় থাকা স্বাভাবিক। কারণ দীর্ঘদিন ধরে মুষ্টিমেয় ছাড়া সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি; বরং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। ফলে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা। সাম্প্রতিক সময়ে তারা প্রতি মুহূর্ত অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাচ্ছেন। তাদের জীবন থেকে স্বস্তি বিদায় নিয়েছে।
খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সরকার খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মতো ইতিবাচক উদ্যোগগুলো বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব কর্মসূচির আওতায় দেয়া খাদ্যদ্রব্য কী সাধারণ বা যেসব দরিদ্র মানুষের উদ্দেশে দেয়া হয়, তারা পাচ্ছেন? এগুলো কি নিরপেক্ষ বা তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে?
সঙ্গতকারণে বলা যায়, অব্যাহতভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে- বৈশ্বিক খাদ্যসঙ্কট, খাদ্যের উচ্চমূল্য ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি দেশের বেশির ভাগ মানুষকে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে; যার সবচেয়ে বেশি শিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চাল-গম বিতরণ বাড়ানো উচিত। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদে থাকা মানুষের কাছে দ্রুত ও সহজে সঠিকভাবে খাদ্যপণ্য পৌঁছানোর ওপর জোর দিতে হবে সরকারকে।


আরো সংবাদ



premium cement