কার্যকর উদ্যোগের লক্ষণ নেই
- ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১:২৬
লুটপাট এবং মুদ্রা পাচারের বড় বড় অঙ্কের কথা এতদিন বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে। কারা কুশীলব তা প্রকাশ্যে আসেনি। এখন সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সীমাহীন দুর্নীতি প্রকাশ পাচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর সাবেক প্রধান, সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রধান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্যতম সদস্যের দুর্নীতি প্রকাশ হয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হলে কোথায় হাত দিতে হবে এসব ঘটনা তার ইঙ্গিত দেয়। অথচ সরকার আগের মতো কথার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল নিয়েছে। দুর্নীতি দমনে সরকারের বিশেষ তাগিদ কার্যক্রমে দৃশ্যমান নয়। তবে সচিব কমিটি এর মধ্যে দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত একটি সভা করেছে। এখানেও কিছু গতানুগতিক কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’ সেই কর্তৃপক্ষ পাওয়া যাচ্ছে না।
সচিব কমিটি এ ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে যে, দুর্নীতিবাজরা পদোন্নতি পাবে না। ভালো পদায়ন তাদের যাতে করা না হয়। এ ছাড়া শুদ্ধাচার বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রমাণ করে এ নীতি এতদিন মানা হয়নি। একটি বাহিনী প্রধান যখন তার ক্ষমতা বলে টানা অবৈধ সম্পত্তি অর্জন করতে থাকেন, বড় বড় অনিয়ম করেন; তা সরকারের অগোচরে থাকার কথা নয়। পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে এক যুগের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে পদায়ন পেয়েছেন। যেসব অবৈধ সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে ঠিক এ সময় তা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, একই সময় তিনি পুলিশের সেরা পুরস্কার বিপিএম পেয়েছেন। ২০১১-১৯ সালের মধ্যে পাঁচবার এ পুরস্কার পান। এ বাহিনীর আরো যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাদের অনেকে পদোন্নতি এবং পুরস্কার পেয়েছেন। এমন বহু ঘটনা আমরা বেসামরিক প্রশাসনেও দেখতে পাবো; যারা দুর্নীতি অনিয়ম করেন তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভূত ক্ষমতা ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেন।
খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনে দেখা গেল শিষ্টের দমন দুষ্টের পালনের নীতি গ্রহণের। দুদকের সাবেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো: শরিফ প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি ভূমিখেকো মাফিয়াচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন। অন্য দিকে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘুষবাণিজ্য করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেও, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা মতিউরের বেলায়ও দেখা গেল, তিনি রাষ্ট্রের ভেতর থেকে আনুকূল্য পেয়ে রাঘববোয়াল হয়েছেন।
সচিব কমিটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে যে নীতির কথা বলছে, সেটি এতদিন যে মানা হয়নি, তা স্পষ্ট। দুদকের তথ্য-উপাত্তেও এর প্রমাণ রয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শতাধিক দুর্নীতির মামলায় ৩৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের অর্ধেক সরকারি চাকরিজীবী। আসামিদের ৯৬ শতাংশ মধ্যম ও নিম্নসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী। একটি সংবাদমাধ্যম এর আগের সাত বছরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখেছে- দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে উচ্চপদবির লোকেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করা হচ্ছে। কর্তাব্যক্তিরা প্রায়ই বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে- এটি আসলে বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। কার্যত সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া দুর্নীতি কিভাবে দমন করা হবে তা নিয়ে কোনো দিশা এখনো দেখা যাচ্ছে না। দুর্নীতির লাগাম টেনে দেশকে বাঁচাতে সরকারের কার্যক্রমের মধ্যে তেমন লক্ষণ অনুপস্থিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা