সংস্কার সময়ের দাবি
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
দেশের সব নাগরিকের মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সবাই যাতে সমভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে নেয়াও এই দায়িত্বের অংশ। এ জন্য কোটার মতো বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাতে সমাজ এবং রাষ্ট্রে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীকে কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা সব দেশেই আছে; কিন্তু তা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। যত দিন অনগ্রসর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মূলধারার মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষমতা অর্জন না করে; তত দিন বিশেষ সুবিধা টিকিয়ে রাখা ন্যায্য। এর ব্যতিক্রম হলে এটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে ওঠে। কায়েমি স্বার্থ মজবুত করতেও ব্যবহার করা হয়।
বিশেষ ব্যবস্থা পক্ষপাতহীনভাবে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রয়োগ করলে একসময় পশ্চাৎপদ বা অনগ্রসরদের রাষ্ট্রপ্রদত্ত সুবিধার প্রয়োজন পড়ে না। সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকা বাঞ্ছনীয়; কিন্তু আমাদের দেশে পশ্চাৎপদ বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণীকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়ার নামে কোটাব্যবস্থা যেন চিরস্থায়ী করে ফেলা হয়েছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা।
বাংলাদেশে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বহাল ছিল। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। বাকি মাত্র ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হতো। কোটার কারণে অনেক মেধাবী সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হন।
গত দেড় দশক ধরে দেশে কোটাব্যবস্থার উৎকট প্রয়োগ দেখা যায়, যার ফলে মেধাবী অথচ বঞ্চিত অনেকে ক্ষুব্ধ হন। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি তোলে ২০১৮ সালে। ওই সময় শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবি ছিল, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটাব্যবস্থা কমিয়ে ১০ ভাগে নামিয়ে আনা। এর সপক্ষে সারা দেশে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন সামাল দিতে সরকার বাধ্য হয় কোটাব্যবস্থা বিলোপে। সরকারের পক্ষ থেকে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে) কোটা বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করলে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এর পর থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের ওই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে এবার মাঠে নেমেছেন।
কোটা বাতিলের দাবিতে গত মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগে অবরোধ চলাকালে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের বিষয়। আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।’
চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের বর্তমান কোটা বাতিল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলা অসঙ্গত নয় যে, কোটার যেমন যৌক্তিকতা রয়েছে, তেমনি এর অপপ্রয়োগও কাম্য নয়। তাই আন্দোলনকারীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি সরকার বিবেচনায় নেবে এটাই প্রত্যাশিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা