২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কারা কর্তৃপক্ষের দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ

-

বাংলাদেশের কারাগার সংশোধনাগারের বদলে হয়ে উঠেছে দুর্নীতির আখড়া। যত ধরনের অপরাধ হতে পারে সব ঘটে। এগুলো অপেনসিক্রেট। এর সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে কারা প্রশাসন। এ অবস্থায় একজন অপরাধী এখানে এসে শুদ্ধাচার শিখবেন তা আশা করা অবান্তর। বরং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভালো লোক দুর্ভাগ্যক্রমে কারাগারে এসে পড়লে তিনিও নানা অপরাধের প্রশিক্ষণ পাবেন। এই যখন দেশের কারাগারগুলোর অবস্থা; তখন সরকারের উদ্যোগ নেই কোনো সংস্কারের। কারা কর্তৃপক্ষের লোকজন যখন অপরাধ করে ধরা পড়েন, তারপরও তাদের শাস্তি হয় না। সেখানকার সংস্কৃতি হলো- যিনি যত বেশি অনিয়ম দুর্নীতি করতে সিদ্ধহস্ত; তিনি তত গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন।
সম্প্রতি বগুড়া কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কনডেম সেলের কয়েদি পালিয়ে যায়। বন্দী পালানোর ফিল্মি স্টাইল যতটা কারণ কারাবন্দীদের কৌশল, তার চেয়ে বেশি কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি। কারাবন্দীরা ২৫ দিন ধরে টানা ছাদ ছিদ্র করেছে। এতে তারা ব্যবহার করেছে অ্যালুমিনিয়ামের বালতির হাতলসহ আরো কিছু সরঞ্জাম। এরপর সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় কারাগার থেকে। বগুড়া কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতির বহু খবর এখন মিডিয়ায়। এখানে কারাবন্দীদের পুঁজি করে চলে অর্থ আদায়ের রমরমা বাণিজ্য। ওয়ার্ড, খাবার, ক্যান্টিন, দেখার ঘর, কারা হাসপাতালে চলছে চরম অনিয়ম।
এমনকি বন্দীদের ভুল নামে এন্ট্রি করে তারও একটি সুযোগ নেয়া হয়। যখন তাদের মুক্তির আদেশ আসে ভুল নামের সুযোগ নিয়ে বন্দীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়। খবরে প্রকাশ, দীর্ঘদিন ধরে ছাদ ফুটো করার উপাদানও তারা অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছে। দেখা যাচ্ছে, বগুড়া কারাগারে নিচু থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত অবাধে দুর্নীতি চলছে। দেশের সব কারাগারের অবস্থাও এর ব্যতিক্রম নয়।
বন্দী পালানো কারাগারে একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ কাশিমপুর কারাগার থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর সিদ্দিক পালিয়ে যান। এ জন্য তিনি কারাগারের ভেতরে বসে মই তৈরি করেছেন। সেটি বেয়ে আবার প্রধান ফটক হয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন। এ সময় কর্তৃপক্ষের লোকেরা সবাই ছিলেন। কিন্তু পলায়নপর কয়েদি আটকানোর তাগিদ বোধ করেননি। গুরুত্বপূর্ণ কারাগার থেকে কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার আরো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এগুলো ঘটতে পেরেছে কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায়। আবার এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
শাস্তি হিসেবে সতর্ক করা কিংবা চাকরির বেতন বৃদ্ধি কিছু দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়া হলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। সাধারণত তাদের কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে বদলি করা হয়। দেখা যায়, এ অপরাধী কিছু দিন না যেতে আবার আগের স্থলে ফিরে আসছেন। বগুড়া কারাগারের বর্তমান জেলার নেত্রকোনা কারাগারে থাকার সময় একটি গুরুতর অপরাধ তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়। তখন তাকে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হয়। এর আগে-পরেও তিনি নানা কারণে অভিযুক্ত হয়েছেন। এই ব্যক্তির বগুড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়ন হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কারা বিভাগে বদলি ও পদায়নে নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। অতীতে অভিজ্ঞ, অপেক্ষাকৃত দক্ষ, যোগ্য, সাহসী ও সক্ষম জেল অফিসারদের জেলা কারাগারে পদায়ন করা হতো। এখন এর নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে এমন লোকদের হাতে যারা নিজেরা অভিযুক্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা বদলানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে জেলপালানোসহ সেখানে চলা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement