২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা ভূমিকেন্দ্রিক

বিচারের আওতায় নেই স্বার্থান্বেষীরা

-

বর্তমান সরকারের শাসনের এক দশকে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পরিচালিত এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, তাদের ওপর চড়াও হওয়ার মূল কারণ ভূমি। একটি শ্রেণী অপকৌশলে তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় প্রচারণা চালিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। এ কাজে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে তীব্র ঘৃণা ছড়িয়ে জমিজিরাত হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়। এখানে গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো- কাজটি এমন এক সময় বেশি হচ্ছে যখন সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হওয়ার কৃতিত্ব নেয়। ক্ষমতাসীন দল সংখ্যালঘুদের উপর যেকোনো ধরনের নির্যাতনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করে। রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে অব্যাহত সুযোগ নেয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের (সিএ) ও বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও) পরিচালিত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ সরকারের আমালে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত আছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, মোট সহিংসতার ৫৯ শতাংশ ঘটে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি ধর্মীয় স্থান ধ্বংসের মাধ্যমে। ১১ শতাংশ সরাসরি ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধ ঘিরে। তবে এসব ঘটনার অন্তরালে একটিই কারণ; স্থাবর সম্পত্তি ভোগদখল। গবেষকদের মতে, ৭০ শতাংশ সহিংসতা আসলে ভূমিকেন্দ্রিক। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যকে ঘটনা উসকে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গবেষকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব ঘটনার মূলে থাকে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল। তারা ভর করেন সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্যে। এ কাজে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সায় থাকে। বর্তমান সরকারের আমলে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক পক্ষ চিনতে অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশে প্রশাসন, বিচার সব জায়গায় তারা প্রভাব বিস্তার করে আছেন। পুলিশ পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অবস্থা দেখে। তারা নিয়ম অনুযায়ী স্বাধীনভাবে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার সক্ষমতা রাখে না। একই অবস্থা বিচারব্যবস্থায় লক্ষ্যণীয়। বিচারের গতি কিংবা একটি বিষয় বিচারে আসবে কি না তা প্রভাবশালীদের মর্জির ওপর প্রধানত নির্ভর করে।
সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ধ্বংস লুটপাট কিংবা আক্রমণে টার্গেট করে প্রচারণা চালানো হয় সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সচেতন। তাদের দমিয়ে রাখতে এই ইস্যু অব্যাহত ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ঘটনার পর পর একে সাম্প্রদায়িক অবয়ব দেয়া হয়। এতে করে প্রকৃত অপরাধীরা কখনো বিচারের আওতায় আসেন না। আওয়ামী লীগের দাবি, তারা সংখ্যালঘুবান্ধব রাজনৈতিক দল। তাই তাদের টানা দেড় যুগের বেশি শাসনামলে দেশ থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতন শতভাগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি সমানতালে অব্যাহত আছে।
প্রশ্ন হলো- কেন এই দেড় দশকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অবসান হলো না? এর রহস্য লুকিয়ে আছে দেশের ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বাস্তবতায়। বুঝতে অসুবিধা হয় না; সংখ্যালঘু ইস্যু রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ থেকে শুধু ফায়দা লুটতে চাইলে সমস্যার সমাধান হবে না। হিন্দুসহ দেশে বসবাসরত প্রতিটি সম্প্রদায়ের লোকজনকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দেখতে হবে। যারা তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন করছেন; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অপরাধীকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement