সাংবাদিকদের উৎসাহিত করা দরকার
- ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এখন প্রধান সঙ্কট দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে না পারায় এর নেতিবাচক প্রভাব পুরো অর্থনীতি গ্রাস করতে বসেছে। মুষ্টিমেয় ব্যক্তি দুর্নীতিতে জড়িত হলেও এর ভুক্তভোগী পুরো দেশবাসী। বিশেষত উচ্চ মূল্যস্ফীতি জনগণের ভোগান্তির প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। তাই দেশবাসী আজ দুর্নীতিবাজদের ওপর ক্ষুব্ধ। দুর্নীতিবাজরা সরকারের কোন বিভাগের চাকুরে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেখার বিষয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না।
সম্প্রতি পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কয়েক ব্যক্তির দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়েছে। এসব খবর প্রকাশের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অথচ সরকারের অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে প্রায় নিয়মিতই প্রকাশ পায়। সেসব বিভাগ কিন্তু দুর্নীতিবাজদের পক্ষে দাঁড়ায়নি।
পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘অতিরঞ্জিত রিপোর্ট’ আখ্যা দিয়েছে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। তাদের মতে, ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এগুলোকে সাংবাদিকতার অপেশাদারি আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা সংবাদমাধ্যমকে এ ধরনের ‘বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট’ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে। মূলত কিছু দিন ধরে পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়েছে। অবৈধভাবে বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ক্ষমতার সীমাহীন অপব্যবহারের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। দুদকের তদন্তের সূত্র ধরে এই প্যান্ডোরার বক্স উন্মোচিত হয়েছে।
এরপর সাবেক আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর উন্মোচিত হয়েছে। একই সময় পুলিশের কিছু বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও খবর আসছে। আমরা অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশের পক্ষে নই। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতা কোথায় লঙ্ঘন হয়েছে তা দেখায়নি পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। তারা পুলিশ বাহিনীর বিকাশের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলতে পারে। সব দুর্নীতিবাজ যাতে পাদপ্রদীপের আলোয় আসে সে জন্য সংবাদম্যাধ্যমকে উৎসাহিত করতে পারে। কারণ এর মাধ্যমে বাহিনীর শুদ্ধতার প্রশ্ন যেমন জড়িত, একইভাবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যও অর্জিত হবে। যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাই তারা বলতে পারতেন। কিন্তু যে ভাষায় তারা বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তাতে সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে। ফলে সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিবৃতি প্রকাশের প্রতিবাদ করছে। তারা অ্যাসোসিয়েশনের এ ধরনের বিবৃতিকে হুমকি হিসেবে দেখছে। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনও।
বাংলাদেশের মূল ধারার সাংবাদিকতার মান নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তারা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানমূলক খবর প্রকাশ করে না। বিশেষ করে ক্ষমতাশালীদের ক্ষেত্রে নীরবতা পালন করছে। তাই মানুষ এখন অনির্ভরযোগ্য সামাজিকমাধ্যমের ওপর বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে । একজন সম্পাদক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি বেনজীরের অবাধ দুর্নীতির কথা জানতেন। কিন্তু প্রকাশের সাহস পাননি। এই যখন বাস্তবতা তখন পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
বাংলাদেশে দুর্নীতির সুনামি চলছে। এই অবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে জাতির শত্রু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। দুর্নীতির মূলোৎপাটনে এ সম্পর্কিত বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশে সাংবাদিকদের উৎসাহিত করা হবে এটিই প্রত্যাশিত। সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরা দেশের জন্য শুভ হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা