২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সারা দেশে ছড়িয়েছে সাপাতঙ্ক

উদ্দেশ্যমূলক নয় তো!

-

সাপ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। সামাজিকমাধ্যম তো বটেই মূল ধারার গণমাধ্যমও এর বাইরে নয়। সংবাদমাধ্যমের খবর, রাসেল ভাইপার নামে বিষধর একটি সাপ হঠাৎ প্রায় সারা দেশে ছড়িয়েছে। এর কামড়ে মৃত্যুর খবর গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করেছে মিডিয়া। কিন্তু বাস্তবভিত্তিক তথ্যনির্ভর খবর প্রচার ও প্রকাশে আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি। ফলে সামাজিকমাধ্যমে দ্রুত সাপাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে ছড়িয়েছে- এমন কথাও প্রচারণা পায়। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেনি কেউ; বরং আইন অনুযায়ী সাপ মারা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এই সাপ মারলে পুরস্কার দেবেন বলে ঘোষণা দেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। আবার সর্পদংশনে মৃত্যুর চেয়ে ডেঙ্গুজ্বরে মারা যাওয়ার সংখ্যা বেশি হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু নয়; বরং বেশি তৎপরতা দেখায় সাপ নিয়ে। ঘটনার পারম্পর্য থেকে অনেকে মনে করছেন, এ ঘটনার পেছনে মহলবিশেষের বিশেষ উদ্দেশ্য কাজ করতে পারে।
কিছু শীর্ষ আমলার বেলাগাম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবিশ্বাস্য পরিমাণে সম্পদ অর্জনের নানা ঘটনা একের পর এক প্রকাশ্যে আসা, অর্থনীতির অন্তিম দশা নিয়ে উপর্যুপরি আলোচনা, দেশের বাইরে একজন এমপির খুন হওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর নানা বিষয় থেকে মানুষের নজর সরিয়ে দেয়া হয়তো কারো জন্য জরুরি ছিল। সে ক্ষেত্রে কূটকৌশলে সাপাতঙ্ক ছড়ানো সফলতা পেয়েছে বলা যায়।
দিন তিনেক আগে রাসেল ভাইপার নিয়ে প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশ করেন কেউ কেউ। তারা জানান, রাসেল ভাইপার মূলত বাংলাদেশের চিরপরিচিত চন্দ্রবোড়া সাপ। এটি খুব বিষধর নয়। এর পর প্রধান দুয়েকটি পত্রিকা প্রকৃত তথ্যসহ বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ করলে পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টাতে শুরু করে। এখন জানা যাচ্ছে, চন্দ্রবোড়া বিষধর বটে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। এটি মোটেই পৃথিবীর পঞ্চম বিষধর সাপ নয়। আন্তর্জাতিক মানে এটি বিষধর প্রথম ৩০টি সাপের মধ্যেও নেই। চন্দ্রবোড়া বরং আমাদের গোখরা, কেউটের চেয়েও কম বিষধর। বাংলাদেশে এ সাপের দংশনের পর ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার রেকর্ড আছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, অলস প্রকৃতির চন্দ্রবোড়া মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। নিজের বিপদ বুঝলেই শুধু মানুষকে আক্রমণ করে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সাপের বিষের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম মজুদ আছে এবং সেটি বিনামূল্যে দেয়া হয়।
আগে কিছু বন্যপ্রাণী ও ঈগল, সারসের মতো পাখি সাপ খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখত। এসব বন্যপ্রাণী এখন প্রায় নেই। এগুলো নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। ফলে সাপের উপদ্রব কিছুটা বাড়তে পারে। তা ছাড়া চন্দ্রবোড়া সাপ মানুষের জন্য উপকারীও বটে। এরা ইঁদুর খেয়ে একদিকে ফসল রক্ষা করে, আবার পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এর বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়।
এ দেশে রাজনীতিতে সাপের একটি ভূমিকা আগে থেকে আছে। সাপ ছেড়ে দিয়ে বিপক্ষের জনসভা পণ্ড করার নজির রয়েছে। এবার সাপাতঙ্ক যুক্ত হলো জনতার চোখ সরিয়ে নেয়ার কাজে। সত্যি রাজনীতির অভিনব উদ্ভাবন বটে!


আরো সংবাদ



premium cement