দুর্নীতি ও অর্থ পাচার দায়ী
- ২৩ জুন ২০২৪, ০০:৩৩
দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হতে যাচ্ছে বলার সময় আসেনি। তবে অর্থনীতি ভালো যাচ্ছে না। রিজার্ভ কমে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের নিচে। বিদেশী সংস্থা ও কোম্পানির তিন গুণ বেশি, যা পরিশোধ করতে হবে অবশিষ্ট রিজার্ভ থেকেই। যদি নতুন অনুদান, ঋণ না আসে। পাওনা আদায়ে আনুষ্ঠানিক তাগাদা আসতে শুরু করেছে। খেলাপি ঋণ জাতীয় বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ প্রায় লাখ কোটি টাকা। এ অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ সামান্যই। এরই মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতিসংক্রান্ত কেলেঙ্কারির নানা অবিশ্বাস্য কাহিনী।
সরকারি দলের এক নেতা ও এমপি কলকাতায় খুন হওয়ার পর সম্ভাব্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল। সেই ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরে গেছে সরকারি কর্তাদের আর্থিক দুর্নীতিসম্পর্কিত খবরের জোয়ারে। এখন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীরাই বলতে শুরু করেছেন সঙ্কটের পেছনের কারণ।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গত বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে বলেছেন, দেশে ডলার সঙ্কটের শুরু অর্থ পাচারের কারণে। দেশ থেকে বছরে সাত-আট বিলিয়ন ডলার বা ৮১ থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী একটি ব্যাংক কমিশন, না হলে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।
একই সেমিনারে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে হবে, কারণ সংস্থাটি আমাদের টাকা দেয়। আপনি টাকা দিন, আপনার কথা শুনব। মন্ত্রী যতই নিরেট হোন, যখন এই ভাষায় কথা বলেন, ভরসার জায়গা থাকে না।
তবে অর্থমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীই অর্থনীতি ও দেশের মানুষের অবস্থা নিয়ে এমন সব কথা বলছেন, যা বাস্তবতা থেকে বহু দূরে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, মানুষের পকেটে টাকা আছে। টাকা না থাকলে লাখ টাকা দিয়ে কোরবানি দিতো না। তিনি বলেন, ভর্তুকির কারণে রিজার্ভ কমেছে।
প্রতিমন্ত্রীর এই কথাটি নিখাদ সত্য যে, অনেকেরই পকেটে টাকা আছে। বলা ভালো, অবিশ্বাস্য পরিমাণেই আছে। তাদের ছেলেরা ১৫ লাখ টাকায় খাসি কোরবানি দেয়, রাজধানীতে দুই-তিন ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, আলীশান বাড়ি বানায়, হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে। সেই নমুনা দেখা যাচ্ছে সাবেক র্যাব পুলিশের প্রধান, পুলিশ প্রধান, এনবিআর সদস্য এবং আরো অনেকের কেলেঙ্কারি প্রকাশের ঘটনায়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জাতীয় সংসদে বলেন, আমলাদের একটি অংশ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠেছে। তবে এমন ভাবার কারণ নেই যে, কেবল আমলাদের একাংশই দুর্নীতিগ্রস্ত। কোন মন্ত্রী কোথায় কত জমি নানা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন, কে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণে হাজার কোটি টাকা বানিয়েছেন, একটি-দু’টি হলেও এমন খবর গণমাধ্যমে আসেনি তা নয়। কার থলের বেড়াল কখন বেরিয়ে পড়ে তারও নিশ্চয়তা নেই।
বিভিন্ন নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামার খবর কে না দেখেছে! রাজনীতিকের হাজারগুণ আয় বৃদ্ধির ঘটনা অনেকের চোখে অষ্টম আশ্চর্য হয়ে আছে। বিদেশের কথিত বেগমপাড়ার সব বাড়ি শুধু আমলাদের নয়, রাজনীতিকদেরও আছে। এসব নিয়ে দুদক তদন্ত করতে পারত। কিন্তু করেনি।
মূল বিষয় হলো, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কারণেই আজ অর্থনীতি পর্যুদস্ত। ব্যাংক খাত লণ্ডভণ্ড।
বিপুল মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষের বুকে হাঁপ ধরে গেছে। সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ কঠোর সংস্কার কর্মসূচি ছাড়া অর্থনীতির হাল ফিরবে না এটা জানা কথা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা