২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষকতায় মেধাবীদের অনীহা

বেতন-সম্মান বাড়াতে হবে

-

বর্তমান প্রযুক্তির এই জমানায় বিশ্বে কোনো দেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষার মান ক্রমাগত তলানির দিকে। বৈশ্বিক যেকোনো সূচক সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই যে দেশের শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে, এর অন্যতম কারণ হলো আমাদের মেধাবী শিক্ষকের বড় অভাব। অথচ মানসম্পন্ন শিক্ষায় চাই মেধাবী শিক্ষক। কিন্তু দেশে দিন দিন মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। পরিণতিতে মানসম্পন্ন শিক্ষা না পেয়ে এখানকার শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়ছেন।
প্রশ্ন হলো- কেন মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে অনাগ্রহী? এর জবাবে বলা যায়, আর্থিক অনিশ্চয়তা এবং আগের মতো সম্মান না থাকা এর জন্য দায়ী। এ ছাড়া মাধ্যমিক এমপিওভুক্ত ও সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতনবৈষম্য তো রয়েছেই। এ দিকে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের দায়িত্ব বাড়ানো হলেও বেতন-ভাতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেই।
লক্ষণীয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষকরা বেশ পিছিয়ে। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে। যেমন- বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রারম্ভিক মাসিক বেতন ১৮ হাজার ৫০০, ভারতে ৩৫ হাজার, পাকিস্তানে ৩০ হাজার, শ্রীলঙ্কায় ২৭ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার, ভুটানে ৩৩ হাজার ও মালদ্বীপে ৬৩ হাজার টাকা। উন্নত বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হয় প্রাথমিকে। তাদের বেতন-ভাতাও অন্যান্য শিক্ষকের চেয়ে বেশি। ফলে দেখা যাচ্ছে- প্রয়োজনীয় বেতন-ভাতা এবং সম্মান না থাকায় আমাদের দেশে শিক্ষকতা পেশা দিন দিন শ্রীহীন হয়ে পড়ছে। অনেকে অন্য কোনো চাকরি পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

আমাদের দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি। মূলত এগুলো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী। এখন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার পদ খালি। এর মূল কারণ এত অল্প টাকা বেতনে কোনোভাবেই চলা সম্ভব নয় বলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন না শিক্ষিতরা। যারা এ পেশায় যোগ দিচ্ছেন, তারাও বেতন কম হওয়ায় অন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। শিক্ষকতায় ঢুকে প্রাইভেট-কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়েন। এখানে আয় বেশি হওয়ায় স্কুলের চেয়ে তারা প্রাইভেট পড়ানোতে বেশি মনোযোগী হন। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওই সব শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ঠিক মতো করাতে পারেন না। এতে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মান কমছে।
এমন বাস্তবতায় আমাদের নীতিনির্ধারকদের এ সত্য অনুধাবন করতে হবে, শিক্ষার উন্নয়নে আগে শিক্ষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাদের দক্ষতা বাড়ানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি বেতন-ভাতা সম্মানজনক করতে হবে। কিন্তু সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ বাড়ালেও বেতন-ভাতা বাড়ানোর উদ্যোগ এখনো নেয়নি। এমনকি ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করেনি।
সঙ্গত কারণে এ কথা বলা যায়, শুধু শিক্ষার অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়লে গুণগত মানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাথে শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন, মান-মর্যাদা ও বেতন, তিনটি সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার। এ বাস্তবতায় যত দ্রুত সম্ভব দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামোর সংশোধন আনতে হবে। নয়তো এখন যাও শিক্ষকতায় কিছু মেধাবী আসবেন; আগামীতে তা-ও পাওয়া যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement