২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
মোটা দাগে থেমে নেই মুদ্রাপাচার

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

-

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ চলছে। চারদিকে লুটেরাদের জয়জয়কার। প্রকাশ্যে দুর্নীতি হচ্ছে কিন্তু তা ঠেকাতে সিস্টেম কার্যকর নেই। যারা দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা নিজেরা এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক সদস্যের বিপুল দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়েছে। এগুলো সত্য হলে সাধারণ দুর্নীতিবাজদের ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। দুর্নীতি করে উপার্জিত অর্থের যতটুকু অংশ দেশে পাওয়া যাচ্ছে; তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এর চেয়ে ঢের বেশি ভিনদেশে পাচার হয়েছে। তার পরিবারের একটি অংশ বিদেশে আয়েশি জীবনযাপন করে। বিলাসী এই জীবনযাপনের অর্থের কোনো বৈধ উৎস নেই। এমন বাংলাদেশী পরিবারের সংখ্যা বিদেশে এখন অসংখ্য। দেশে ডলার সঙ্কটের পেছনে প্রতিনিয়ত অর্থপাচার প্রধান কারণ।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুদ্রাপাচার বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে তদন্তকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। কারা বিদেশে পাচার করে দেশের সর্বনাশ করছেন, সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েও মুদ্রাপাচারকারীদের নিয়ে তদন্তে আগ্রহী নয় সরকার। তাদের নাম প্রকাশ ও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির এক সেমিনারে বক্তারা দেশ থেকে উচ্চহারে মুদ্রাপাচার অব্যাহত থাকার ক্ষতিকর দিকটি তুলে ধরেন। তারা জানান, প্রতি বছর সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার মতো। এর আগে বিভিন্ন সূত্রে মুদ্রাপাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় প্রতিটি হিসাবে দেখা গেছে, এ সরকারের আমলে গড়ে এক লাখ কোটি টাকা করে পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের গন্তব্য কোথায় তাও অজানা নয়। দুর্নীতিবাজরা কিভাবে এই অর্থ পাচার করছেন; সেটিও জানা। বিশেষ করে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে চলছে অসাধুদের এ কর্মকাণ্ড। প্রতি অর্থবছরে এ তথ্য প্রকাশও করা হচ্ছে।

বিগত কয়েক দশকে মুদ্রাপাচারের একটি গন্তব্য ছিল সুইস ব্যাংক। কঠোর গোপনীয়তার জন্য পাচারকারীরা সেখানে অর্থ গচ্ছিত রাখতেন। এ সরকারের মেয়াদের প্রথম দিকে সুইজ ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমা রাখার হার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে সম্প্রতি কয়েক বছরে তা ছেদ পড়েছে। গত বছর সুইজ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশীরা ৫৯৭ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন। ওই বছরের শুরুতে আমানত ছিল ৭২৯ কোটি টাকা। এক বছরে কমেছে ৬৫ শতাংশ। কারণ হিসেবে জানা যায়, দুর্নীতিবাজরা অর্থ গচ্ছিত রাখার আরো নিরাপদ গন্তব্য খুঁজে পেয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, পাচারকারীদের অবাধ সুযোগ নিয়ে। তারা দেশ থেকে অনেকটা অবাধে অবৈধভাবে অর্থ পাচার করছেন। আবার সেই অর্থের নিরাপত্তায় সেগুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। সরকারের কাছে এসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। চাইলে বাধা সৃষ্টি করতে পারত সরকার। ওই সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারত। অর্থনৈতিক দুরবস্থার আরেকটি প্রধান কারণ ঋণের নামে ব্যাংক খাতে লুটপাট। বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাথে সংশ্লিষ্টরা এর বড় অংশ পাচার করেছেন, বাকিটা দিয়ে দেশে নামে-বেনামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি করেছেন। সরকার এগুলো দেখেও দেখছে না।
এসব কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ নেই। যারা সঙ্কট থেকে উদ্ধার করবেন তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ। এ অবস্থায় গণমানুষের তীব্র প্রতিবাদ সরকারের হুঁশ ফেরাতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement