২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বারবার বন্যাকবলিত সিলেট

দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজুন

-

ঈদুল আজহার দু’দিন আগে থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। ঈদের সকাল থেকে ধেয়ে আসে উজানের ঢল। রাতের মধ্যে ডুবে যায় পুরো সিলেট। লাখো পানিবন্দী মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়। ইতোমধ্যে হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করছেন। দু’য়ে মিলে ১৫ দিনের ব্যবধানে ফের বিপর্যয়ের মুখে সিলেট। এমন পরিস্থিতি কেবল ২০২২ সালে হয়েছিল।

সিলেট ও ভারতের মেঘালয়ে এবার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। দুই জায়গায় প্রায় তিন হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস; সিলেটে আরো কয়েক দিন বৃষ্টি হবে। উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার আভাস দেয়া হয়েছে। ফলে সহসা স্বস্তি আসছে না। লক্ষণীয়, গত তিন বছর ধরে বারবার ডুবছে সিলেট। বিশেষ করে ৬-৭ বছর ধরে বেশি বন্যাকবলিত হচ্ছে সিলেট নগরী। এতে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বন্যা শেষে আশ্রয়শিবির থেকে মানুষজন যখন বাড়ি ফেরেন তখন তারা নিঃস্ব। এ থেকে পরিত্রাণের যেন উপায় নেই।
পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি কারণে সিলেট বারবার বন্যাকবলিত হচ্ছে। প্রথমত, সিলেট অঞ্চল পানি নিষ্কাশনের উল্লেখযোগ্য অববাহিকায় অবস্থিত। এর উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল। এ দুই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ সিলেট ও সুনামগঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনে গত ৫-৬ বছর ধরে সিলেট অঞ্চল ও এর উজানে অতি বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার তথ্য, চলতি জুনের এ পর্যন্ত সিলেটের উজানের মেঘালয় অববাহিকায় ১৬৫০ মিলিমিটার এবং সিলেটের সুরমা অববাহিকায় ১৭ জুন পর্যন্ত ১৭০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়ও সিলেটে এত বৃষ্টিপাত হয়নি। তখন জুনে সিলেটে বৃষ্টি হয়েছিল ১৪৫৬ মিলিমিটার।

দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর উজানের ঢলে মেঘালয় থেকে বিপুল পলিমাটি সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারাসহ সীমান্তবর্তী নদীতে আসে। বছরের পর বছর পলিমাটি পড়ে সব নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীগুলো হারিয়ে ফেলেছে পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের ক্ষমতা। একই সাথে হাওর, খাল ও পুকুর ভরাট করে সিলেটে উন্নয়ন হচ্ছে। এতেও রুদ্ধ হয়েছে পানি নিষ্কাশনের পথ।
তৃতীয়ত, সিলেটের বেশির ভাগ পানি অপসারণ হয় সুরমা নদী দিয়ে। কিন্তু জকিগঞ্জের অমলসিদ থেকে সুনামগঞ্জের ভাটিতে মেঘনা নদী পর্যন্ত সুরমায় কখনো খনন হয়নি। পানি দ্রুত নামছে না। এছাড়া কিশোরগঞ্জে হাওরের মধ্যখান দিয়ে মিঠামইন-অষ্টগ্রাম রাস্তা করা হয়েছে সেটিও সিলেটে জলমগ্ন হওয়ার অন্যতম কারণ।
সিলেট বন্যাকবলিত হওয়ার আরো একটি কারণ- এ অঞ্চলের সব সীমান্ত নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়েছে। উজানে অতিবৃষ্টি হলে বাঁধ খুলে দেয় ভারত। এতে রাতারাতি তলিয়ে যায় সিলেট।
সিলেট এখন দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। নদী খননের প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না। এর জন্য দায়ী প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতা। অথচ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দরকার সব দফতরের সমন্বিত উদ্যোগের। এর অভাবে সিলেটবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বন্যা থেকে সিলেটবাসীকে রক্ষায় দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিকল্প নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement