২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
নির্ধারিত দরে এবারো বিক্রি হয়নি

চামড়ার ন্যায্যমূল্য যেন দুরাশা

-

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যের চাহিদা রয়েছে। পর্যাপ্ত কাঁচা চামড়ার জোগান থাকায় আমাদের চামড়াশিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ও কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় এ খাতের কাক্সিক্ষত প্রসারে প্রকট ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। বলা ভালো, পাটের পরিণতির দিকে যাচ্ছে চামড়াশিল্প। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এর বড় প্রমাণ। এবারো সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে কাঁচা চামড়া কম দামে বিক্রি হয়েছে। আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনুমান, এবার ঈদুল আজহায় এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছে।
কাঁচা চামড়ার দাম আশানুরূপ না হওয়ার কারণ হিসেবে এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সরাসরি বাংলাদেশী চামড়া কিনছে না। ফলে বাংলাদেশী চামড়ার বড় ক্রেতা বর্তমানে চীন। তারা কম দাম দেয়। এর প্রভাব কাঁচা চামড়ার দামে পড়ছে। তবে কাঁচা চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও এর সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, প্রতি বছর ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে কমে কাঁচা চামড়া কেনায় তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

চামড়া খাতের একাধিক বাণিজ্যসংগঠনের নেতাদের সাথে গত ৩ জুন বৈঠক করে কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। রাজধানীর বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০-৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ছাড়া গত বছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম ছিল ১৮-২০ টাকা। এবার বাড়িয়ে ২০-২৫ টাকা করা হয়। অন্য দিকে বকরির চামড়ার দাম বর্গফুট-প্রতি বাড়ানো হয় ছয় টাকা। অর্থাৎ ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা এক হাজার ৩৭৫ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এ হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ গড়ে ৩০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৭৫ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। গণমাধ্যমের খবর, ঢাকায় এবার বড় গরুর চামড়া প্রতিটি ৮০০-৯০০ টাকা, মাঝারি ৬০০-৭০০ টাকা এবং ছোট গরুর চামড়া ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামে বড় আকারের কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর চামড়ার দাম ছিল ৪০০-৬০০ টাকা। অন্য দিকে রাজশাহীতে বড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়।

গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতিটি গতবারের তুলনায় ঢাকায় ৫০-১০০ টাকা বাড়লেও নির্ধারিত দরের চেয়ে ২৭৫-৩০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। অন্য দিকে খাসি-বকরির চামড়া সর্বোচ্চ ১০ টাকায় বিক্রি হয়। গত কয়েক বছরের মতো।
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরে ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এ চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সাভারের হেমায়েতপুরের ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে। সঙ্গত কারণে বলা যায়, দূষণরোধ ও চামড়ার বাজার বাড়ানো নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পরিকল্পনা রয়েছে বটে; কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। তাই দ্রুত সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে আমাদের চামড়া বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে নাÑ এমন বাস্তবতা নীতিনির্ধারকরা আমলে নিয়ে উদ্যোগ নেবেন, এই প্রত্যাশা সবার।


আরো সংবাদ



premium cement